ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
গার্ডার চাপায় নিহত ৫: অভিযুক্ত ১০ জন গ্রেফতার
Published : Thursday, 18 August, 2022 at 2:49 PM
গার্ডার চাপায় নিহত ৫: অভিযুক্ত ১০ জন গ্রেফতাররাজধানীর উত্তরায় গার্ডার পড়ে ৫ জন নিহতের ঘটনায় ক্রেন চালকসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, র‌্যাব-১, ৩, ৪, ৬ ও ১২ সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ক্রেনচালক মো. আল আমিন হোসেন ওরফে হৃদয় (২৫), হেলপার  রাকিব হোসেন (২৩), দুর্ঘটনাস্থলে নিরপাত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান (মো. রুবেল (২৮), মো. আফরোজ মিয়া (৫০), ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ (৩৯), ভি ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিক মো. ইফতেখার হোসেন (৩৯), হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু (৪৫), ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানীর মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তুষার (৪২), প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা (৩৩) এবং মো. মঞ্জুরুল ইসলাম (২৯)। তাদের রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, কালসি, সাভার, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

খন্দকার মঈন বলেন, ‘এখানে শুধু অপারেটর-চালককে ধরেছি তা নয়। যে ক্রেন সরবরাহ করেছে, কিনেছে তাদেরও ধরা হয়েছে। এখানে একটি কমিটি কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে যাদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি, তাদের আমরা গ্রেফতার করেছি। যাদের মনে করেছি, এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। আইন সবার জন্য সমান। অপরাধ করে এই সরকারের সময় কেউ পার পায়নি। এখানে তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট নিয়ে কাজ করছে, কনক্লুসিভ একটি রিপোর্ট হবে। সেখানে এই দুর্ঘটনায় যাদের ইনভল্ভমেন্ট আসবে, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাইনিজ গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের কোন লেভেল পর্যন্ত এখানে জড়িত, কারা জড়িত— এসব বিষয় কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বা যে কার্যক্রম ছিল, স্টেপ বাই স্টেপ আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে আরও জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ আছে।’

র‌্যাব বলছে, গত ১৫ আগস্ট বিকালে বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) ক্রেন দিয়ে প্রজেক্টের গার্ডার ওঠানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ক্রেনের চালক/অপারেটর মো. আল আমিন ও হেলপার রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি হতে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামক একটি প্রতিষ্ঠান, যার মালিক গ্রেফতারকৃত ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন গ্রেফতারকৃত আজহারুল ইসলাম মিঠু। ইফসকনের কাছে বড় ক্রেন না থাকায় তারা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছ থেকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটি ভাড়া নেয়। এছাড়াও প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান আফরোজ ও রুবেল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি এর সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলীকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের এবং হেভি ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সিজিজিসি’র প্রকিউরমেন্ট অফিসার মঞ্জুরুল ইসলামকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাব আরও জানায়, ক্রেনের মূল অপারেটর আল আমিনের হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালানোর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর ২-৩টি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২২ সালের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। গ্রেফতার রাকিব ৩ মাস আগে প্রকল্পের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। তার ক্রেন চালনা করার কোনও ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার দিনে আল আমিন ও রাকিব দুপুর ২টা থেকে ক্রেন চালনা শুরু করে। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে দ্বিতীয় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলনের জন্য ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডারটি প্রাইভেট কারের ওপর ছিটকে পড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর হেলপার রাকিব পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইফসকন কোম্পানি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি হতে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পায়। গার্ডার বহনের ক্রেন ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে না থাকায় বিল্ড ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান হতে অপারেটর ও হেলপারসহ ওই ক্রেনটি মাসিক চুক্তিতে ভাড়া নেয়। ইফসকনের মালিক গ্রেফতার ইফতেখার ও হেড অব অপারেশন মিঠু অপারেটরদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও ক্রেনের ফিটনেস যাচাই না করেই গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সড়কে ভারী গার্ডার স্থাপনের কাজে নিয়োজিত করছিলেন। এছাড়াও গার্ডার স্থাপনের সময় অতিরিক্ত একটি সহায়ক ক্রেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না।

র‌্যাব জানায়, থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লি. মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ওই ক্রেন সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃত রুহুল আমিন ও মার্কেটিং ম্যানেজার গ্রেফতার তুষার ক্রেনের ভাড়া প্রদান, চুক্তি, ড্রাইভার নিয়োগ; ক্রেনসগুলোর ফিটনেস যাচাইসহ অন্যান্য দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। রুহুল ২০১০ সালে এবং গ্রেফতার তুষার ২০১৫ সালে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। তারা অতিরিক্ত লাভের জন্য অল্প পারিশ্রমিকে ভারী গাড়ি চালনার লাইসেন্স ব্যতীত অপারেটর আল আমিনকে নিয়োগ দেয়। এছাড়া ওই ক্রেনের সর্বশেষ ফিটনেস যাচাই করা হয়েছিল ২০২১ সালে। কিন্তু ২০২২ সালে ক্রেনের কোনও ধরনের ফিটনেস যাচাই করা হয়নি।