বিলের মাঝে সড়কবিহীন স্কুল ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম
Published : Wednesday, 1 June, 2022 at 12:00 AM
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের ১৯২নং বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কোন প্রকার সড়ক নির্মিত হয়নি। এছাড়াও বিদ্যালয়টির চারদিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরী, বৈদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি না থাকায় অমানবিক ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টি নানাহ সমস্যায় জর্জরিত হলেও যেন দেখার কেউ নেই!
সরেজিমেনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রথমে রেজিস্টার স্কুল হিসেবে রানীমুহুরী-বড়ইয়াকুড়ি সড়কের পাশে স্থাপিত হয়। ২০১২ সালে স্কুলটিকে জাতীয়করণ করে। বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে ২০১৭ সালে পাশের বিলের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচী (পিইডিপি-৩) এর মাধ্যমে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট আধুনিক একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়।
ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার রানীমুহুরী-বড়ইয়াকুড়ি সড়কটির পাশে প্রায় ২০ গজ দূরত্বে বিলের মধ্যে বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ করে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু স্কুলটিতে যাতায়াতের জন্য কোনো রাস্তা নেই। বিদ্যালয়টির চারিদিকে ফসলি জমি, একটু বৃষ্টিতেই স্কুল চত্বরে পানি জমে থাকে। বিশুদ্ধ পানির জন্য সামারসিবল পাম্প বসানো হলেও বিদ্যালয়টি বিলের মধ্যে হওয়ায় সেই পাম্প ও পানির কাজে ব্যবহৃত পাইপ চুরি হয়ে গেছে। বিদ্যুতের কারণে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় শিক্ষা থেকে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্টরা খুটির ব্যাবস্থা করলেও জমির মালিকদের আপত্তির কারণে সম্ভব হয়নি। সরকার সবকয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রজেক্টর ভিত্তিক) মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সকল বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু নতুন এ তথ্য প্রযুক্তির আওতায় ক্লাশ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও পাচ্ছেনা এই শিক্ষা। তাতে করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান থেকে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এসব নানাহ সমস্যায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কাযক্রম। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আশ-পাশের গ্রাম গুলোতে শিক্ষার হার দিন দিন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেমনি ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘স্যার একবার মনে হয় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ কইরা দেই। এ ছাড়া আর কি করমু বলেন গরমের সময় রৈদের (রোদের) তাপে শরীর এত ঘামে যে বই, খাতা যা ধরি সব ভিজে যায়। আর শীতকালে একটু বেশি কুয়াশা পড়লে ক্লাসরুম এত অন্ধকার হয় যে, বইয়ের পড়া বুঝা খুব দায়’।
প্রধান শিক্ষক ছালমা আক্তার বলেন, স্কুলটির প্রধান সমস্যা সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ। আমরা এখানে মানবেতর ভাবে জীবন কাটাচ্ছি। বর্ষাকালে ভিজা কাপড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হয়। সড়ক নির্মাণ হলে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া যাবে। বিষয়টি একাধিক বার উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে আমাদের অবহিত করেছে। সড়ক ও বিদ্যুতের বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ব্যবস্থাপনা পরিচালনা পরিষদ অনেক বার স্থানীয় ভাবে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। গত উপজেলা মাসিক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমপি মহোদয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টিকে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, বিষটির ব্যাপারে খোজ-ঁখবর নিয়ে বিস্তারিত বলতে হবে। যদি সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।