
জহির শান্ত:
গেলোবারের
মতো এবারও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএম
পদ্ধতিতে। কিন্তু ইভিএম নিয়ে নানা শঙ্কা ও অজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন কুসিক
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা বলেন,
প্রায়ই দেখা যায় ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙ্গুলের ছাপ) মিলে না, মেশিন
নষ্ট হয়ে যায় কিংবা ভোটগ্রহণে ধীরগতি থাকে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও যদি
এমনটা দেখা দেখা যায়Ñ তবে করণীয় কি? এসব প্রশ্নের জবাবে সবাইকে আশ্বস্ত করে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ইভিএম নিয়ে শঙ্কার
কিছু নেই। ভোট দিতে এসে কাউকে ফিরে যেতে হবে না। ’
রবিবার কুসিক
নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে
মতবিনিময় সভায় মিলিত হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এসময়
প্রার্থীদের কাছ থেকে মতামত জানতে চাওয়া হলে বেশিরভাগ প্রার্থীই ইভিএম নিয়ে
তাদের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। কারো কারো অভিযোগ ছিলো প্রতিদ্বন্দ্বি
প্রার্থীর হুমকি-ধমকি ও জোর-জবরদস্তি নিয়েও।
এই পর্বের শুরুতেই ইভিএম
নিয়ে প্রশ্ন তুলেন কুসিকের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া
বলেন, ইভিএমে ভোট দিতে গেলে অনেকসময় দেখা যায়, ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ মিলে
না- এ ক্ষেত্রে করণী কি? তার প্রশ্নের সাথে সুর মিলিয়ে ৯ নং ওয়ার্ডের
কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৬ বারের সাবেক কাউন্সিলর জমির উদ্দিন খান জম্পি বলেন,
বিগত দিনে আমরা দেখেছি বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ না মেলার
হারটা বেশি। আবার অনেক সময় ইভিএমে ভোটগ্রহণ স্লো হয়। যদি ভোট দিতে দেরি হয়-
তবে কি ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো হবে। একই ধরনের প্রশ্ন আরো বেশ কিছু
প্রার্থীকেই করতে শোনা গেছে।
কুসিকের সদ্য বিদায়ী মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও ইভিএম নিয়ে এসব অভিযোগের সাথে সঙ্গতি প্রকাশ করেন।
আরেক
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমি নির্বাচনের শুরু থেকেই
ইভিএম বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেহেতু সিদ্ধান্ত
নিয়েই ফেলেছেন, তাই আমি প্রস্তাব রাখবো ভোট দেওয়ার পর যেনো একটি প্রিন্ট
আউটের ব্যবস্থা থাকে। আর সেটি সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটি বাক্স রাখা হয়।
যেনো ভোট নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে যেনো এই প্রিন্ট আউট কাজে লাগানো যায়।
ইসলামী
শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম জানান, বিগত দিনে আমি
নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন দেখেছি ইভিএমে ভোট দিতে এসে ভোটারদের
নানাভাবে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বয়স্ক
ভোটারদের বিপাকে পড়তে হয় বেশি। তাই আমি আহবান জানাবো- এ বিষয়টা যেনো
ভালোভাবে তদারকি করা হয়।
ইভিএম ছাড়াও সিইসির কাছে নানা অভিযোগ-অনুযোগ তুলে ধরেন প্রার্থীরা।
ইভিএম
নিয়ে প্রার্থীদের এসব প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম নিয়ে আশঙ্কা করার মতো কোনো কিছু নেই। ইভিএম
মেশিনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোট চলাকালে
ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকবেন। কোনো সমস্যা হলে তারা
সহযোগিতা করবেন। এছাড়া ভোটারকে চিহ্নিত করে মনিটরে দেখা হবে। যদি কারো
আঙ্গুলের ছাপ নাও মিলে তার ভোটার নাম্বার দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ভোট
দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভোটারকে অবশ্যই ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র
সাথে নিয়ে যেতে হবে।
ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে যারা কিছুটা দুশ্চিন্তায়
আছেন কিংবা ভোট দিতে জানে না, তাদের জন্য মগ ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেখানে উপস্থিত হয়ে আপনারা ইভিএমে ভোটপ্রদান সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হতে
পারবেনা।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি
বলেন, ভোটকেন্দ্র থাকবে আমাদের নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। প্রতিটি
কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। সেখানেও যদি কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা
করেন পুলিশ প্রশাসনকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ
নেওয়া হবে। তারপরও যদি মাসল পাওয়ার (পেশি শক্তির ব্যবহার) বেশি হয়
সেক্ষেত্রে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে। ইভিএমে যেহেতু ভোট হবে; সেক্ষেত্রে
মাসল পাওয়ার খুব বেশি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সুতরাং সহিংসতা করে লাভ
নেই। কুমিল্লায় ভোট সুষ্ঠু হবে।
ইভিএম নিয়ে নানা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে
মতবিনিময় সভার বিশেষ অতিথি নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর বলেন, আমরা এটা
জানি যে, অনেকেরই হাতে ছাপ মিলে না। আপনারা জানেন, ইভিএমে ব্যালট বাক্সের
মতো আগে পরে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। একজন ভোটারের একের অধিক ভোট দেওয়ারও
কোনো সুযোগ নেই। একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবেন না। ইভিএমে জালভোট দেওয়ার
সুযোগ নেই। অর্থাৎ সুষ্ঠু ভোটের জন্যই আমরা ইভিএমের ব্যবস্থা করেছি। হাতের
ছাপ না মিললেও ভোটার যদি উপস্থিত হন তিনি ভোট দিয়েই যাবেন।
ভোটের ধীর
গতি হলেও চিন্তার কোনোর কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটার যদি উপস্থিত
থাকেন আর মেশিন স্লো হওয়ার কারণে যদি ভোট দিতে রাত দশটা এগারোটা বারোটাও
বাজে তাহলেও তাদের ভোট শেষ করা হবে। মেশিন যদি ডিস্টার্ব করে তাহলেও সমস্যা
নেই। যারা ইভিএম কাস্টমাইজেশনে ঢাকা যাবে না, তারা দেখবেন কখন কোথায়
কিভাবে কী করা হয়। ইভিএম মেশিনে মেমোরি কার্ড থাকে। মেশিন ডিস্টার্ব হলে
সাপোর্টিং মেশিন রয়েছে। সেটা পরিবর্তন করে মেমোরি কার্ড সাপোর্টিং মেশিনে
সেট করা হবে। তখন দেখবেন যেখানে ভোট শেষ হয়েছিলো সেখান থেকেই শুরু হবে।
সুতরাং ইভিএম নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিচব ফরহাদ আহাম্মদ খান, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের
রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী, কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ,
কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ দুলাল তালুকদার।