ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘মুক্তিযুদ্ধে নজরুলের গান ছিল প্রেরণার উৎস’
Published : Saturday, 28 May, 2022 at 12:00 AM
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ জাকীর হোসেন বলেছেন, নজরুল দৌলতপুর আসায় এ এলাকাবাসী ভাগ্যবান। তিনি নার্গিসের সাথে প্রেম নিবেদন করে পরিনয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। তার এই স্মৃতি ধন্য কবিতীর্থ দৌলতপুরকে উন্নয়ন করতে হলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি কবিকে মানবতার কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি ও জাতীয় কবি উল্লেখ করে বলেন, তার গান, কবিতা, উপন্যাস ও নাটক বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার গান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস। তিনি নজরুলের সৃষ্টি কর্মের মুল্যায়ন করার জন্য নজরুল প্রেমিক গবেষকদের আহবান জানান। নজরুল ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি নারী নীতির উল্লেখ করে বলেন, নর-নারী অংশ গ্রহনের মাধ্যমে দেশ উন্নত হবে নজরুল আমাদেরকে এ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন ত্রিশালের দরিরামপুরের মতো দৌলতপুরের গুরত্ব অনেক। আগামীতে কুমিল্লায় নয়, জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান দৌলতপুরে হওয়া উচিৎ। কারণ, যৌবনে যিনি এখানে এসে নার্গিসকে বিয়ে করেন। তিনি ক্ষনাজন্মা মহান পুরুষ। যদি এখানে বিয়ে না হতো ধুমকেতুর মতো উদিত হতে পারতো না। তিনি দৌলতপুরবাসীকে নজরুলের স্মৃতি রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। ত্রিশালে কিছুদিন অবস্থান করে যদি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে তাহলে দৌলতপুরে বিশ্বদ্যিালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠান হতে পারে।
মোহাম্মদ জাকীর হোসেন শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কবিতীর্থ দৌলতপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ কুমিল্লার সহকারী পরিচালক শওকত উসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান আলম কিশোর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কবির আহামেদের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ তমাল, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন, কবি পত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরী বাবলু আলী খান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমুল আলম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহাম্মেদ সোহাগ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আকতার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম তালুকদার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল হাই খান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মমিনুল হক, উপজেলা স্কাউটসের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ, কেন্দ্রিয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গাজীউল হক চৌধুরী ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূফি আহমেদ প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পিবৃন্দের অংশ গ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পরে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত নজরুল সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও ‘নজরুল চেতনায় স্বাধীনতা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ কুমিল্লার সহকারী পরিচালক শওকত উসমান বলেন, কবি নজরুল যে কত বড় মনের মানুষ ছিলেন, নজরুল প্রেমী ভক্তবৃন্দ দৌলতপুরে না এলে তা কেউ অনুধাবন করতে পারবেন না। দৌলতপুর আগের চেয়ে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্যতা ও স্মৃতিধন্য হয়েছে। ১৯২১ সালের দৌলতপুর আর এখনকার দৌলতপুর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, কবি নজরুলের দ্বিতীয় জন্ম মুরাদনগরের দৌলতপুর থেকে শুরু। যখন তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে নিজের ভাব ও চেতনাকে সাধারণ মানুষের সাথে যুক্ত করেছেন। তাঁর পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করেছে মাত্র ২৩ বছর সাহিত্য জীবনে। কবির দ্রোহ, প্রেম, ভালবাসা, ব্যর্থতাসহ সবকিছু নিয়ে দৌলতপুরের প্রেক্ষাপট অনেক গুরুত্বের দাবিদার। নজরুলের মাঝে বাঙালীসত্তা পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তাঁর কবিতা, গান ও প্রবন্ধে সেগুলোর সাক্ষর বহন করে। নজরুল তাঁর লেখনীর মাধ্যমে নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের চেষ্টা করতেন। তিনি পত্রিকায় লেখার কারণে বার বার জেল খেটেছেন। নজরুল বাঙ্গালী ও নারী স্বাধীনতার কথা লিখে গেছেন। তাঁর কলম ছিল দুর্দমনীয়। নজরুল চর্চার মাধ্যমে নবপ্রজন্মের কাছে নজরুলের চেতনা তুলে ধরার জন্য নজরুল গবেষক ও শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান। তিনি দৌলতপুরে নার্গিস-নজরুল বিদ্যা নিকেতনসহ অন্যান্য স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা নজরুলের চাওয়া-পাওয়ার মর্যাদা দিতে পারি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন,বলেন, নজরুলের গান, কবিতা সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত করেছেন। তিনি অবিভক্ত বাংলা কিংবা ভারতের কবি নন, তিনি বিশ্ব কবি। তিনি তার লেখায় বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উৎসাহ উদ্দীপনায় তাকে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেন। আমরা নজরুলের স্মৃতিকে ধরে রাখতে হলে কবি নজরুলের নামে প্রস্তাবিত থানা বাস্তবায়ন করতে হবে। নজরুলের স্মৃতিকে চিরস্মরনীয় রাখতে হলে সকলে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি নজরুলের চেতনাকে ধারণ ও লালন করে নতুন প্রজন্মকে চর্চা করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, নজরুলের লেখা কবিতা, গান এবং সাহিত্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। নজরুলের অগ্নিঝরা লেখনি শোষিত-বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ে আমাদের সোচ্চার করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ ও সমাজের কুসংস্কার দূর করতে নজরুল সবসময় তারণ্যের জয়গান গেয়েছেন।