
পরিবেশ
দূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ৯০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এর মধ্যে
শুধু বায়ুদূষণের কারণে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছে ৬৭ লাখ মানুষের। এ ছাড়া
পানিদূষণের কারণে ১৪ লাখ এবং রাসায়নিক দূষণের কারণে ৯ লাখের বেশি মানুষের
মৃত্যু হয়। তার অর্থ প্রতি ছয়টি অকাল মৃত্যুর একটি ঘটে পরিবেশ দূষণের
কারণে।
আর এই অকাল মৃত্যুর বড় একটি অংশই ঘটে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র
দেশগুলোতে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ ও হালনাগাদ করে
‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ, ইনজুরি অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস স্টাডি ২০১৯’-এ
এই তথ্য তুলে ধরা হয়। গত মঙ্গলবার ল্যানসেট প্লানেট হেলথ সাময়িকীতে এই
তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
পরিবেশদূষণ, বিশেষ করে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক
প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০২১’ প্রকাশ করেছে।
তাতেও ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে
রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পরেই রয়েছে পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল। আর
রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, প্রথম স্থানে আছে
ভারতের নয়াদিল্লি। আইকিউএয়ার ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ
করে আসছে। চার বছর ধরেই বাংলাদেশ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ল্যানসেটে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে
দূষণে ২৭ থেকে ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সেই
সংখ্যা আরো বেশি। সেখানে দূষণজনিত কারণে প্রতি লাখে ৩৭ থেকে ৪৭ জনের মৃত্যু
হয়।
অতীতে গৃহের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ ও পানিদূষণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে চরম
দারিদ্র্য একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই কারণকে ছাড়িয়ে
গেছে আধুনিকায়ন। শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার
এবং নানা ধরনের রাসায়নিক বর্জ্য পরিবেশকে দ্রুত বিপজ্জনক করে তুলছে। ২০১৯
সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, আধুনিক এসব দূষণজনিত মৃত্যুর পরিমাণ ২০১৫ সালের
পর থেকে বেড়েছে ৭ শতাংশ এবং ২০০০ সালের পর থেকে বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।
বায়ুদূষণের
কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফুসফুসের। কারণ দূষিত বায়ুর সঙ্গে থাকা
ক্ষতিকর বস্তুকণা (পার্টিকুলেটেড ম্যাটার বা পিএম) নিঃশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি
ফুসফুসে ঢুকে যায়। এরপর রক্তের সঙ্গে সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। ফুসফুসের
সক্রিয়তা বা পিএফটি (পালমোনারি ফাংশন টেস্ট) পরীক্ষাভিত্তিক এক জরিপে দেখা
যায়, ঢাকার ২৩.৪৭ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। এর
মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া দূষণজনিত কারণে হৃদরোগ,
লিভার-কিডনির রোগ এবং নানা ধরনের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। আমরা
কতকাল এভাবে অনিয়ন্ত্রিত বায়ুদূষণের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত
করে যাব?
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে লোকালয়ের
কাছাকাছি পুরনো পদ্ধতির ইটখোলা, অত্যধিক দূষণযুক্ত কলকারখানা, বর্জ্য
শোধনের ব্যবস্থা না থাকা, পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নগরজুড়ে
খোঁড়াখুঁড়ি, ঢাকনা ছাড়া বালু ও মাটি পরিবহন ইত্যাদি। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত
দূষণের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি নেই বললেই
চলে। আমরা চাই, জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর দূষণগুলো নিয়ন্ত্রণে
দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।