ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বর্জ্য অপসারণ একটি চেতনা
Published : Saturday, 21 May, 2022 at 12:00 AM
বর্জ্য অপসারণ একটি চেতনা অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ।।
জনতার জিজ্ঞাসা বর্জ্য কিভাবে তৈরি হয়, এটা সংগ্রহ করে কিভাবে, এটা পরিবহন করে কিভাবে এবং অপসারণ করে কিভাবে। এও তাদের জিজ্ঞাসা কিভাবে বর্জ্য থেকে ক্ষতিকারক পদার্থের তৈরি হয় ও তৈরি বন্ধ করা যায় তা কিভাবে পুন:ব্যবহার করা যায় এবং রিসাইক্লিং করা যায়।
খুব জনপ্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে-
১। রিসাইক্লিং ২। ইনসিনারেসন বা পুড়িয়ে ফেলা ৩। জমি ভর্তি করা বা লেন্ডফিল ৪। প্রাণীজ পদ্ধতি বা বাইওলজিক্যাল রিপ্রসেসিং ৫। প্রাণীকে খাওয়ানোর মাধ্যমে বা এনিমেল ফিড। উন্নত মানে, স্বাস্থ্য বাঁচানো অর্থনৈতিকভাবে কম মূল্যে মুক্ত বর্জ্য সংরক্ষণ, সংগ্রহ, পরিবহন এবং বর্জ্য অপসারণে পরিবেশ দুষণ না করে, মাটি এবং পানি দূষণ না করে ব্যবস্থাপনা করাই চায় জনতা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৫টি:- জবফঁপব, জবঁংব, জবঢ়ধরৎ, জড়ঃ এবং  জবপুপষব হচ্ছে ব্যবস্থাপনার আসল উদ্দেশ্য। বর্জ্য অপসারণের সংজ্ঞাই হচ্ছে উচ্ছিষ্ট ও দূষিত পদার্থসমূহকে পারিপার্শিকতা থেকে সরিয়ে ফেলা। এখানে উচ্ছিষ্ট বা দুষিত পদার্থ হচ্চে গার্বেজ, সিওয়ায়েজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসমূহ। গার্বেজ পুন: ব্যবহারের ব্যাপারটি পরিবেশ দূষণ , ঘরবাড়ী এবং ব্যবসায় পরিচ্ছন্নতা আনয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। এই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে উৎস কমানো (ঝবৎারপব ৎবফঁপঃরড়হ) পুন:ব্যবহার (জবঁংব) পশু দিয়ে খাওয়ানো  (অহরসধষ ভববফরহম) কম্পোষ্টিং (ঈড়সঢ়ড়ংঃরহম) ফার্মেন্টেশন (ঋবৎসবহঃধঃরড়হ), ভূমিপুরণ (খধহফভরষষং), পুড়িয়ে ফেলা (ওহপরহবৎধঃরড়হ), এবং ভূমিতে ব্যবহার (খধহফ ধঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ) জড়িত। এভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভূমি এবং পারিপার্শিকতাকে পরিচ্ছন্ন রাখে। পারিপার্শিক মানুষগুলোকে রোগমুক্ত রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় ফেলে দেয়া পদার্থসমূহ থেকে মুক্ত থাকতে একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে সহায়তা করে। শুধু পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেয় তাই বলব না, যদি সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্যসমূহ অপসারণ করা হয় তবে মানুষ ক্ষতিকারক কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, মিথেন ও অন্যান্য গ্যাস যা একত্রিত বর্জ্য থেকে উৎপন্ন হয় তা থেকে মানুষকে রক্ষা করে। প্লাষ্টিক রিসাইক্লিং মানুষকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করে। কাগজ রিসাইক্লিং এ আমরা চেষ্টা চালালে হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা যেত। শক্তি সঞ্চয় হত। রিসাইক্লিং শিল্পে প্রচুর কর্মচারী নিয়োজিত হত। বাণিজ্য অনেক ভালভাবে এগিয়ে যেত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইকোবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহারে বর্জ্য পদার্থ পুন:ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় এবং মানুষকে পুন:ব্যবহারের প্রচলনে সারাজীবন অভ্যস্থ করা যায়। ছুড়ে ফেলে দেয়া আবর্জনা মাটিতে পুতে ফেলে শুধু পরিবেশ মুক্ত হয়না তার সাথে যে দুর্গন্ধ আছে তাও দূর করা যায় বলে মনে হয়। স্বল্প পরিমানে হলে তা পুতে ফেলা যায় কিন্তু বেশী হলে তাকে পুতে না ফেলে উন্নত মানে একত্রিক করে পুন:ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় যদি নির্দিষ্ট বর্জ্য নিষ্কাশন পাত্রে তা সাময়িকভাবে রক্ষণ করা হয়। মাটিতে পুতে ফেলা বর্জ্য বিভিন্ন সংক্রামক রোগ বা ছোয়াছে রোগের জন্ম দেয়। পুতে ফেলা বর্জ্য বাতাস ও পানিকে দূষণ করে, ইনসিনারেশন বা কম্পোষ্টিং যেখানে পৌর বর্জ্যরে উপর করা হয় সেখানে প্রচণ্ডতাপে পুড়ানো হয় সেখানেও গ্যাসীয় ক্ষতিকারক পদার্থ তৈরি হচ্ছে। ইনসিনারেশন ২০-৩০% আয়তনে কমায় যা গ্যাস, স্টিম ও ছাইয়ে পরিণত হয়। ল্যান্ডফিল যেখানে সম্ভব নয় সেখানে এটা খুব জনপ্রিয় যেমন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে, রিসাইক্লিং এ বর্জ্য পদার্থকে নতুন ব্যবহারের পদার্থে উৎপন্ন করে। এতে শক্তির অপচয় হয় না এবং সতেজ কাচামাল বা পদার্থের জন্ম দেয়। রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে রিডিউছ, পুন:ব্যবহার নিশ্চিত হয় । এই পদ্ধতি ব্যবহারে শক্তির অপচয় কমে, ল্যান্ডফিল কমে এবং বায়ু ও পানি দূষণ কমে, গ্রীনহাউস গ্যাস কম উৎপন্ন হয় এবং ভবিষ্যতে ব্যবহারের  জন্য প্রাকৃতিক পদার্থের পরিমান বাড়ে।  জৈব বর্জ্য অপসারণে ব্যবহৃত হয় যাহা অনেক সময় বাহিরে রেখে অনুজীবসহ থেকে ফেলতে সহায়তা করে। এই পদ্ধতিতে ক্ষতিকারক জৈব পদার্থের ব্যবহার উপযোগী পদার্থে রূপান্তরিত করা যায়। যদিও অনেক বিতর্কিত তবুও বর্জ্য অপসারনে এ পদ্ধতি অনেক উপকারী। বর্জ্য থেকে শক্তি যা তাপ ও বিদ্যুৎ হিসাবে দেখা যায় এখন খুবই জনপ্রিয় বর্জ্য অপসারন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ননরিসাইকেলেবল বর্জ্যকে তাপ, বিদ্যুৎ অথবা ফুয়েল হিসাবে রুপান্তরিত করা হয়। বার বার এ পদ্ধতি বর্জ্য অপসারনে ব্যবহার করা যায়। কার্বন ইমিশন থেকে এ পদ্ধতি মুক্ত। ইহা বিশ্বকে তাপ বাড়ায় না এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখে।
বিশেষ পদ্ধতিতে ক্ষতিকারক বস্তু ও যা সহজ পদ্ধতি অপসারণ করা যায় না। এবং ছোয়াছে ও সংক্রমন ঘটায় তা অপসারণ করা হয়। বাায়োমেডিকেল বর্জ্য এ পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হয়। আপনি একটি ভাল জগৎ ও সুস্বাস্থ্যকর বিশ্ব আসা করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করবেন । তবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও তার অপসারন পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা করবেন। যে কোন একটি পদ্ধতিতে বর্জ্য অপসারন করতে পারেন। তবে যোগউপযোগী অর্থসাশ্রয়ী ও টেকসই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে পরিবেশকে সুন্দর রাখুন। বর্জ্য থেকে তাপ  বিদ্যুৎ অথবা ফুয়েল যে পদ্ধতিতে তাহা বর্জ্য অপসারণে আমাদের দেশের পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে চালু করা যেতে পারে। কারণ আমাদের বর্জ্যরে পরিমান বেশি এবং তা থেকে যদি আমরা বিদ্যুৎ পেয়ে যাই তবে আমরা পরিবেশ উন্নয়নে একধাপ এগিয়ে যাব এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল থাকব। কমদামে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে শিল্পায়নেও আমরা এগিয়ে যাব। তাই বর্জ্য একটি শিল্প এ শিল্পকে অচিরেই কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়নে আরেকধাপ এগিয়ে যাই এবং পরিবেশ বাদীর বিশ্বগড়ায় মনোনিবেশন করি।
বাসে বা ট্রেনে যেতে অনেকেই চিপস বিস্কুট, পানীয়সহ অনেক শুকনো খাবার সামগ্রী কেনেন। এছাড়া পেয়ারা, বাদাম, ঝালমুড়িসহ বিভিন্ন খাদ্য হকাররা বিক্রি করে। খাওয়ার পর যাত্রীরা প্লাষ্টিকের বোতল, পলিথিন, ঠোঙ্গা, বিস্কুটের পেকেট ও বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ট্রেন বা বাসের ভিতরে ফেলেন। অনেকে জানালার মাধ্যমে বাহিরে ফেলেন। এতে পরিবেশ দূষণসহ রাস্তাঘাট নোংরা হয় । এছাড়া মানুষ পলিথিন, প্লাষ্টিক, বোতল ও প্যাকেট নদীতে ফেলে দেন। এইসব কারনে নদী দূষিত হচ্ছে। এজন্যে সকল ট্রেনের কামড়ায় বা বাসে আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিন বা ঝুড়ি স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজনীয়। এতে যানবাহন পরিস্কার ও পরিবেশ রক্ষা কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হবে।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষই পরিবেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না। প্রতিদিন গৃগস্থালির কাজে, অফিস আদালতে, বাজারে, স্কুল কলেজের আঙ্গিনায় তৈরি হয় ময়লা-আবর্জনা। এই সকল বর্জ্য নিষ্কাশনে নেই কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি। কিন্তু তাহা অপসারনের জন্য একটি পদ্ধতি বের করতে হবে। প্রায় সকলেই অপসারনের ব্যাপারে উদাসীন। যন্ত্রতত্র ফেলে রাখার চাইতে একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে জমা করা উচিত এবং কয়েকদিন পর পর তা নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেজন্য এখনও একটি আইন প্রচলিত আছে। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আর্থিক ও সামাজিক দন্ডের  পদ্ধতি থাকা উচিত। বিভিন্ন নীতি থাকা স্বত্ত্বেও তা অকার্যকর। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় । তা পচে গিয়ে চতুর্দিকে দুর্গন্ধ চড়াচ্ছে। এসব থেকে বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি একটি হুমকি। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। তাই মফস্বল শহরগুলো থেকে সিটি কর্পোরেশন পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত নীতিমালা তৈরি করে সেমতে পরিচালিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
লেখক:সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল