
বাংলাদেশে
বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী প্রচলিত ইটভাটা। অথচ দেশের বেশির ভাগ
ইটভাটারই অনুমোদন নেই। পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি অনেক
ইটভাটার মালিক। তাঁরা কোনো আইন মানেন না।
যেমন মানা হচ্ছে না পার্বত্য
তিন জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে। তিন পার্বত্য জেলায় দেড় শতাধিক
নিবন্ধনহীন অবৈধ ইটভাটা রয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এই তিন জেলার ইটভাটার
মালিকদের বিরুদ্ধে ইটভাটা প্রস্তুত ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩-এর ৪, ৫, ১৪ ও ১৮
ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল
জারি করেছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, সংশ্লিষ্ট তিন জেলার
জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ২৪ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইন
অনুযায়ী লোকালয়ে বা লোকালয়ের কাছাকাছি কিংবা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন
কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যায় না। বাস্তবে বনাঞ্চলের গা ঘেঁষে বা
লোকালয়ের মধ্যেই অনেক ইটভাটা পরিচালিত হতে দেখা যায়। পাহাড়ের মাটি কেটে
ইটভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তিন
পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইটভাটা
থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পাশাপাশি অত্যন্ত ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড,
সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসের মতো গ্যাস নির্গত হয়। পাশাপাশি
অনেক পার্টিকুলেটেড ম্যাটারসও বেরিয়ে বাতাসে মেশে। এতে শ্বাসতন্ত্রের
বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে
ক্যান্সারসহ আরো অনেক রোগ।
সরকার পরিবেশ ধ্বংস রোধে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন
করেছে। ডেল্টা পরিকল্পনা, ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডসহ নানা উদ্যোগ
নিয়েছে। কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় আইন অমান্য করে ইটভাটা কেন? প্রশাসন
উদ্যোগী না হলে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন হবে কিভাবে?
পরিবেশ,
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা না পেলে মানুষও রক্ষা পাবে না। অথচ গাছ
কেটে, বন উজাড় করে, বন্য প্রাণী হত্যা করে আমরা প্রকৃতির ক্ষতি করছি। কোথাও
আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। আদালতের নির্দেশনা মেনে তিন পার্বত্য জেলার অবৈধ
ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।