আধুনিক
বিশ্বে বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অকল্পনীয়। শুধু বাতি বা
বৈদ্যুতিক পাখা নয়, বহু ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামই এখন মানুষের দৈনন্দিন
জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে শিল্প-কলকারখানা,
কর্মসংস্থান—সব কিছুই এখন মূলত বিদ্যুিনর্ভর। সে কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েই
চলেছে বিদ্যুতের চাহিদা। নিকট অতীতে সেই চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যুৎ
উৎপাদন না বাড়ায় দেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়া প্রায় থমকে গিয়েছিল। মানুষের
ভোগান্তিও চরমে উঠেছিল। সংগত কারণেই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা
করে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারও দেওয়া হয়। তার ফলও
ফলতে শুরু করেছে। দেশের ৯৯.৮৫ শতাংশ মানুষ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়
চলে এসেছে। বাকি ০.১৫ শতাংশ মানুষকেও বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার কাজ
দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আশা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমেই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশজুড়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন।
শতভাগ
বিদ্যুতায়নের কাজটি মোটেও সহজ কোনো কাজ ছিল না। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও
পাকিস্তান বিদ্যুতায়নের দিক থেকে এক যুগ আগে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে
ছিল। আজ বাংলাদেশ বিদ্যুতায়নে তাদের পেছনে ফেলেছে। বাংলাদেশে যেখানে ৯৯.৮৫
শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়, সেখানে ভারতে এই হার ৯৮.৮ শতাংশ আর
পাকিস্তানে মাত্র ৭৪ শতাংশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশের এই অর্জন নিঃসন্দেহে
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর জন্য বাংলাদেশকে যে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, তা
রীতিমতো অকল্পনীয়। পাওয়ার সেলের তথ্যানুসারে ২০০৯ সালে দেশে
বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭, আর এখন সেই সংখ্যা হয়েছে ১৪৬। সে
সময় বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, আর এখন উৎপাদন
সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। তখন দেশে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ছিল এক
কোটি আট লাখ, এখন চার কোটি ১৪ লাখ। এ জন্য দেশব্যাপী সঞ্চালন লাইন বাড়াতে
হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বসতি বিস্তৃত হয়েছে। দুর্গম
চরাঞ্চলেও মানুষের বসবাস বেড়েছে। বঙ্গোপসাগরের বুকে থাকা চর
কুকরিমুকরি-মনপুরার মতো দুর্গম চরাঞ্চলসহ বহু চরাঞ্চলে বিদ্যুতের লাইন
নেওয়া হয়েছে নদীর তলদেশ দিয়ে। বড় শহরগুলোতে আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল বসানোর
কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দেশে প্রথম পরমাণুবিদ্যুতের উৎপাদনও শিগগিরই শুরু
হতে যাচ্ছে।
দেশে শিল্পায়নের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে জ্বালানি ও
বিদ্যুতের পর্যাপ্ততা। আমাদের সৌভাগ্য যে সে কাজটির একটি বড় অংশই সম্পন্ন
করা গেছে। আর তার ফলও ফলছে। দেশে শিল্পায়ন দ্রুত এগোচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ
আসার গতি বেড়েছে। ফলে কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এখন বিদ্যুৎ সুবিধা কিভাবে আরো
সুলভ ও সহজলভ্য করা যায় সেই চেষ্টা চালাতে হবে। ঝড়-ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য
প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সঞ্চালনব্যবস্থা যেন ভেঙে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে
হবে। আমরা মনে করি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে
মানুষের জীবনমান আরো দ্রুত এগিয়ে যাবে।