
দেশে খাবারের
ব্যবসায় চরম নৈরাজ্য চলছে। অন্যান্য দেশে প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ হলে
কর্তৃপক্ষ কাউকে হোটেল খোলার অনুমতি দেয়। আমাদের দেশেও পরিবেশ,
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনসহ বিএসটিআই ও কারখানা সনদ
নেওয়ার শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ-২০১৬ (সংশোধিত) বিধি
অনুসারে দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোকে এ, বি, সি ও ডি এই চার ক্যাটাগরিতে
ভাগ করা হয়েছে। সব শ্রেণির রেস্তোরাঁর জন্যই রয়েছে ন্যূনতম ২৪ ধরনের বিধি।
পরিষ্কার রান্নাঘর, রান্না ও বাসনপত্র ধোয়ার পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানির
ব্যবহার, রান্নায় ভালো বা বিশুদ্ধ তেল ব্যবহার, পরিবেশনকারীদের নির্দিষ্ট
পোশাক থাকতে হবে। এ ছাড়া খাবার টেবিলে রান্নাঘরের ধোঁয়া আসা যাবে না,
উচ্ছিষ্ট খাবার অপসারণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত
ওয়াশরুম, এ ও বি শ্রেণির জন্য ন্যূনতম দুটি টয়লেট, সি ও ডি শ্রেণির জন্য
কমপক্ষে একটি টয়লেট, প্রশিক্ষিত বাবুর্চি দিয়ে রেস্তোরাঁ পরিচালনা,
প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের ব্যবস্থা ও নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা থাকতে হবে বিধি
অনুসারে। যুক্তিসংগত মূল্যতালিকা, অভিযোগ বাক্স থাকা, বেঁচে যাওয়া খাবার
যথাযথ সংরক্ষণব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ও রয়েছে বিধিতে। বাসি বা পুরনো তেল
ব্যবহার ও উন্মুক্ত স্থান বা রাস্তার পাশে রান্না নিষিদ্ধ করা হয়েছে
বিধিতে।
২০১৮ সালে রেস্তোরাঁয় স্টিকার লাগিয়ে গ্রেডিং কার্যক্রম চালু
করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য ছিল, গ্রেড দেখেই যেন ভোক্তারা বুঝতে
পারে কোন রেস্তোরাঁর পরিবেশ ও খাবারের মান কেমন। রেস্তোরাঁর মান বোঝাতে
‘এ+’, ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ এই চার গ্রেডে ভাগ করে চারটি রং নির্ধারণ করা হয়।
গ্রেডিং পদ্ধতির আওতায় খাবারের মান, বিশুদ্ধতা, পরিবেশ, ডেকোরেশন, মনিটরে
রান্নাঘরের পরিবেশ দেখা যাওয়ার ব্যবস্থা এবং ওয়েটারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার
বিষয়গুলো রাখা হয়েছে। ৯০ নম্বরের বেশি স্কোর হলে রেস্তোরাঁ সবুজ রঙের
স্টিকার ‘এ+’, স্কোর ৮০-এর বেশি হলে নীল রঙের স্টিকার ‘এ’, ৫৫ থেকে ৭৯
পর্যন্ত স্কোর হলে হলুদ রঙের স্টিকার ‘বি’ এবং ৪৫ থেকে ৫৫ স্কোর হলে কমলা
রঙের স্টিকার ‘সি’ ক্যাটাগরি পাবে। ‘এ+’ মানে হচ্ছে রেস্তোরাঁটি উত্তম, ‘এ’
মানে ভালো, ‘বি’ মানে গড়পড়তা ভালো এবং ‘সি’ মানে মানসম্মত নয়, গ্রেড
পেন্ডিং।
হোটেল চালানো আর দশটা ব্যবসার মতো নয়। এর সঙ্গে লাখ লাখ
মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। আর সে কারণেই এ খাতে শৃঙ্খলা
ফেরানো প্রয়োজন। এই ব্যবসার সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের
প্রশ্নটি জড়িত। ভেজাল খাবার খেয়ে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত
হচ্ছে মানুষ। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে হেলাফেলার সুযোগ নেই। তাই আগে দেশের
রেস্তোরাঁ খাতের মান উন্নয়নে একটি সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিতে হবে।