
জহির শান্ত:
অবৈধ অস্ত্রের 
ঝনঝনানি বেড়েছে কুমিল্লায়। কিলিং মিশন, নির্বাচনী-রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা 
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব অস্ত্র। ঘটছে প্রাণহানি, সন্ত্রাসী 
কর্মকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা। ঠুনকো বিষয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রের 
মহড়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে কুমিল্লাবাসী। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের 
প্যানেল মেয়র সৈয়দ মোঃ সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যাকাণ্ডে ফিল্মি 
স্টাইলে অস্ত্রের ব্যবহার এবং ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে সন্ত্রাসীদের 
মহড়ার বিষয়টি শহরবাসীর আতঙ্কের পালে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। কুমিল্লাবাসীর
 দাবি- পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী যেনো দ্রুত অবৈধ অস্ত্র
 উদ্ধারে অভিযানে নামে- তাহলে শান্তি ফিরে আসবে কুমিল্লায়। আর পুলিশ বলছে, 
অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুরো জেলাজুড়েই অভিযান অব্যাহত 
আছে। সেসব অভিযানে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও 
অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা যেনো সীমান্ত টপকে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে- 
সেজন্য বিজিবিকে সীমান্তে সতর্ক থাকার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ আহবান 
জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, কাউন্সিলর সোহেল হত্যাকাণ্ডের 
পরদিন হত্যার ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটারের মধ্যে একটি বাড়ি থেকে তিনটি 
ব্যাগে থাকা দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ১২ রাউন্ডগুলি ও হাতবোমা উদ্ধার 
করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা- ‘সোহেল হত্যায় এসব অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকতে 
পারে।’ যদিও পুলিশ বলছে- যে ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে- এগুলো এলজি 
কিংবা পাইপগানের নয়। উদ্ধার হওয়া গুলিগুলো চাইনিজ রাইফেলের। এর ফলে নতুন 
করে প্রশ্ন জেগেছে, গুলি যেহেতু উদ্ধার হয়েছে- তার মানে অস্ত্রও আছে। কোথায়
 সেই অস্ত্র?
অপরদিকে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি 
উপজেলার গোলাপেরচর এলাকা থেকে একটি করে বিদেশি পিস্তল, রিভলবার ও দেশিয় 
এলজি বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযানকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মনির 
হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে। ধারণা করা হচ্ছে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে 
সহিংসতার লক্ষ্যে এসব অস্ত্র মজুদ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় 
ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় ব্যবহৃত বেশ কিছু দেশিয় অস্ত্রও জব্দ করেছে 
পুলিশ।
এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) রাজন কুমার 
দাশ জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান 
অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার 
করা হয়েছে। আরো অভিযান চালানো হবে। অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি
 পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কাউন্সিলর সোহেল
 হত্যাকাণ্ডের পরদিন অন্যান্য অস্ত্রের পাশাপাশি রাইফেলের গুলি উদ্ধারের 
প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাইফেলের যে গুলি উদ্ধার করা হয়েছে, সে 
বিষয়ে আমরা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। সেসব অস্ত্রের সন্ধানেও অভিযান চলবে।
খোঁজ
 নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা 
ঘটেছে। যেসব হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। গেলো বছরের ১১ 
নভেম্বর সদর দক্ষিণের চৌয়ারা এলাকায় স্ত্রীর সামনে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন 
করা হয় যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান জিলানীকে। তারও আগে একই এলাকায় 
মোটরসাইকেলে করে এসে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক 
সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে ও
 পরে কুমিল্লায় বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। 
আর সর্বশেষ কুমিল্লা শহরের পাথুরিয়ার পাড়া এলাকায় নিজ কার্যালয়ের পাশের 
একটি সিমেন্টের দোকানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও
 সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র সৈয়দ মো: সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা। 
তার আগে চলতি নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ কুমিল্লার হোমনায় ইউপি নির্বাচন 
চলাকালে সহিংসতা প্রাণ হারান দুই জন। 
কুমিল্লায় বিভিন্ন সময়ে হামলা, 
সংঘর্ষ ও সহিংসতায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকেই; তবে অস্ত্র
 উদ্ধারে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আর এ বিষয়টিই আতঙ্কিত করে 
তুলেছে কুমিল্লাবাসীকে। তাদের মনে উঁকি দিচ্ছে নানা শঙ্কা। আবার কখন কোন্ 
ঘটনাকে ঘিরে দানা বাধে সংঘর্ষ, ঘটে হতাহতের ঘটনা।
বিশিষ্ট নাগরিকরা 
বলছেন, কথায় কথায় অস্ত্রের প্রদর্শন, গুলি করে মানুষ হত্যা, বুলেটের ভয় 
দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টির ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা 
এবং এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে চাঁদাবাজি, কখনো কখনো রাজনৈতিক প্রভাবে
 ব্যবহার হচ্ছে এসব অস্ত্র। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর 
অভিযানে সন্ত্রাসীদের অনেকেই অস্ত্রসহ ধরা পড়লেও তাদের ‘লিডাররা’ রয়ে গেছেন
 ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অস্ত্রবাজি ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা ও 
উদ্বেগ প্রকাশ করে কুমিল্লার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবী 
সহিদুল হক স্বপন বলেন, কুমিল্লার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার অপপ্রয়াস 
চলছেন। একজন নাগরিক হিসেবে আমি শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। কুমিল্লার পরিবেশ এরকম 
ছিলো না। আমাদের প্রিয় শহর কুমিল্লা ভালো নেই। 
তিনি বলেন, বিচারহীনতার 
সংস্কৃতির কারণে এসব হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে। দেলোয়ার হত্যাকাণ্ড, জিলানী 
হত্যাকাণ্ডের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোয় এখনো সাজা হয়নি। ইদানিংকালে 
কুমিল্লায় গুপ্ত হত্যা ব্যাপকতা লাভ করেছে। সন্ত্রাসীরা কী স্পর্ধায় খুন 
করে, অস্ত্র উচিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে চলে যাচ্ছে। এতে করে উৎকণ্ঠা তৈরি 
হয়েছে, মনে শঙ্কা ভর করেছে।
অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে 
পুলিশকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এডভোকেট স্বপন বলেন, পুলিশকে আরো 
তৎপর হতে হবে। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। 
সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। 
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক 
আহমেদ বলেন, কুমিল্লার সংরাইশ এলাকা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো কাউন্সিলর 
সোহেল ও হরিপদ সাহা হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছিলো বলে দৃঢ়ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। 
তারপরও আমরা এই অস্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে 
মিলিয়ে দেখছি। 
সোহেল হত্যা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে 
পুলিশ সুপার বলেন, বেশ কয়েকজন আসামি শনাক্ত হয়েছে। তাদের অবস্থান নিশ্চিত 
হয়ে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম।