
কুমিল্লার চান্দিনায় সম্পত্তির লালসায় প্রতিপক্ষ ভাতিজাকে ফাঁসাতে নিজ কন্যাকে খুন করেছে পিতা ও অন্যান্য স্বজনরা। গত ২ অক্টোবর গভীর রাতে চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর ভূইয়াপাড়া গ্রামে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরী মেয়েটির নাম সালমা আক্তার। সে ওই গ্রামের সোলেমান মিয়ার কন্যা। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে লাশ ক্ষতবিক্ষত করে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। মামলা করা হয় প্রতিপক্ষ ভাতিজাদের বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতে ঘটনার সুচারু নাট্যরূপ দিতে নিজের গলাতেই ছুরি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে হাসপাতালে ভর্তি হন সোলেমান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কিশোরী সালমা হত্যাকাণ্ডের চারদিনের মধ্যেই মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় এ ঘটনায় জড়িত থাকা ৭ জনের মধ্যে দুই জনকে। বাকিরাও আছে পুলিশের কড়া নজরদারীতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. তানভীর আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বছর খানেক আগে চান্দিনার বসন্তপুর গ্রামের সোলামান মিয়ার সাথে সাত শতক জমি নিয়ে তার ভাতিজাদের দ্বন্ধ শুরু হয়। পরে এ নিয়ে একাধিকবার শালিশি বৈঠক হয়। কিন্তু বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় উভয় পক্ষ মামলা মামলা করেন।
পরে ওই সাত শতক জমির লোভে ভাতিজাদের হত্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে আপন মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করে সোলেমান। এ নিয়ে তার ভাই লোকমান হোসেন, আবদুল বাতেন, সোলেমানের উকিল শ্বশুর আবদুর রহমান, প্রতিবেশী আবুল হোসেন, সফিউল্লাহ ও খলিলের সাথে পরিকল্পনা করেন।
ওই সাতজনের পরিকল্পনায় গত ১ অক্টোবর বিকেলে সোলেমান তার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি চান্দিনার রাণীচরা গ্রামে পৌঁছে দেয়া হয়। সেই রাতে বাড়িতে ছিলেন কেবল সোলেমান ও তার ছোট মেয়ে ১৪ বছর বয়সি সালমা আক্তার। গভীর রাতে পিতা সোলেমান ও অন্যান্যরা মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারী কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। ওই ঘটনায় পরদিন ভাতিজাসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান ব্যাপারী।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। বিভিন্ন আলামত ও তদন্তে সন্দেহের তীর ছুটে পিতা সোলেমান ব্যাপারীর দিকে। বিষয়টি আঁচ করতে পারেন সোলেমান ব্যাপারী। সাজিয়ে ফেলেন নতুন নাটক। ৫ অক্টোবর ভোরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে গলায় ছুরিকাহত অবস্থায় পাওয়া যায় সোলেমান ব্যাপারীকে। আহত সোলেমান ব্যাপারী পুলিশকে জানায়, তার ভাতিজরাসহ অন্যান্য আসামীরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়। সিনিয়র অফিসারদের সাথে নিয়ে চলে তদন্তের গভীরতা। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে বুধবার (৬ অক্টোবর) আব্দুর রহমান ও খলিলকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কিশোরী সালমা হত্যাকান্ড এবং পুলিশের সন্দেহ এড়াতে সোলেমানের গলায় ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা। পরে রাতেই বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় আটক আব্দুর রহমান ও খলিল মিয়া। হত্যা অভিযুক্ত পিতাসহ অন্যানরা পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়ার পর স্তম্ভিত হয়ে পড়ে চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামসহ গোটা এলাকা। আর পুলিশ বলছে, সম্পত্তি পেতে আপজনকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুব কমই ঘটে। এ ঘটনাটি অত্যন্ত জঘণ্য ও মর্মান্তিক।