Published : Thursday, 5 May, 2022 at 4:31 PM, Update: 05.05.2022 4:34:33 PM

কুমিল্লায় নতুন জেলা প্রশাসক আসবেন। নাম আবদুল মালেক। দৈনিক কুমিল্লার কাগজ কুমিল্লার মানুষের প্রিয় পত্রিকা হওয়ায় সব তথ্য সবার আগে দেওয়ার একটা নেশা আমার মধ্যে সব সময় কাজ করে। সে জন্য ছুটে গিয়েছিলাম ঢাকায় সচিবালয়ে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব আবদুল মালেক কুমিল্লার নতুন জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তার ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা এবং পরিচিত হওয়া ছিল উদ্দেশ্য। প্রথম দেখাতেই তাঁকে আমার খুব পছন্দ হয়। ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। কথায় কথায় বুঝতে পারলাম মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তাঁর আছে। আমারও নেশা কুমিল্লার মানুষের জন্য কিছু করা।
কুমিল্লায় আসলেন আবদুল মালেক স্যার। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই বিকালে। দায়িত্ব গ্রহণ করে কার্যালয়ে বসেছেন পরদিন ৬ জুলাই। নতুন জেলা প্রশাসকের সাক্ষাতকার নিতে গেলাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের তখনকার যুগ্মআহবায়ক অধ্যক্ষ আফজল খানসহ বিশিষ্ট অনেক নাগরিক ও সাংবাদিকরা তাঁর সাথে দেখা করেন। সবাইকে বিদায় করে দিয়ে সময় দিলেন আমাকে। জানতে চাইলাম কুমিল্লাকে কেমন দেখলেন? বললেন-প্রাণবন্ত কুমিল্লা শহরে মানুষের ব্যস্ততা যানজট-জলাবদ্ধতা চোখে পড়েছে।’ কথায় কথায় কুমিল্লা শহরকে নিয়ে কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। অনেক কিছুই তো করা যায় স্যার। কুমিল্লাকে মেগাসিটি বা সিটি করপোরেশন কি করা যায়? জানতে চাইলেন মেগা সিটি বলতে কি বুঝাতে চাইছেন। বললাম- একটি শহর অনেক পরিছন্ন গোছানো ছবির মতো হবে। উন্নত জীবন ব্যবস্থা, প্রশস্ত সড়ক, নিয়ম মেনে চলাচল, পর্যাপ্ত হাঁটার রাস্তা। আধুনিক সব ভবন, বিমান বন্দর, সরাসরি রেললাইন, নদী পথে ওয়াটার বাস। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ। আধুনিক সব শপিং মল। নামকরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। মিউজিয়াম-আন্তর্জাতিক খেলার মাঠ। মানে একটি বড় শহরে যা যা থাকে।
আবদুল মালেক স্যার আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বললেন হৃদয়-এগুলো তো একজন জেলা প্রশাসকের কাজ না। বললাম স্যার আপনি ছাত্রলীগ করা মানুষ। আপনি স্বপ্নবাজ। আপনি চাইলে পারবেন কিছু করতে। তিনি বললেন-একটা কাজ করা যায়। কুমিল্লাকে সিটি করপোরেশন করা যায়। সিটি করপোরেশন হলে বরাদ্দ অনেকগুন বাড়বে। তাহলে আপনি যা যা বলেছেন তা তা করা সম্ভব হবে। আমি বললাম বিভাগ তো হয় নি স্যার। এটা কিভাবে হবে। বিভাগ হলে সহজেই সিটি করপোরেশন করা যায়। স্যার বললেন না-বিভাগ ছাড়াও সিটি করপোরেশন করা যায়। নারায়ণগঞ্জ হয়েছে না?
-বললাম স্যার আপনি বলেছেন আপনি অল্প সময়ের জন্য কুমিল্লায় এসেছেন। এই অল্প সময়ে এমন কিছু করে যেতে হবে যাতে কুমিল্লার মানুষ আপনাকে মনে রাখে। কথাগুলো আবদুল মালেক স্যারের ভালো লাগে। তিনি বললেন ঠিক আছে দেখি কি করা যায়।
কিন্তু আমার মাথায় তখন অন্য বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে। কুমিল্লার মানুষের তো এটা নিয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। মানুষ চায় কিনা তাও জানতে হবে। বললাম-কুমিল্লার মানুষের মতামত তো জানতে হবে স্যার। সে কারনে আমি একটি প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আপনার উত্তর হিসেবে লিখবো যে, কুমিল্লাকে মেগা সিটি বা সিটি করপোরেশন করা যেতে পারে। দেখি কুমিল্লার মানুষ কি বলে। পরদিন দৈনিক কুমিল্লার কাগজ পত্রিকায় তা ছাপা হলো।

এর পরের ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন। অনেকেরই এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।
আবদুল মালেক স্যার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রস্তাব ফাইল দিয়ে গভীর রাতে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীকে ট্রেনে করে ঢাকায় পাঠান । তারপর বদলি হয়ে যান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হন। ২০১১ সালের ১০ জুলাই যে দিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রজ্ঞাপন হয় সবার আগে আবদুল মালেক স্যার আমাকে ফোন করেন। বললেন হৃদয়-কুমিল্লা তো সিটি করপোরেশন হয়ে গেছে। আমি তোমাকে প্রজ্ঞাপনটা ফ্যাক্সে পাঠাচ্ছি। আমি বললাম স্যার আপনি জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসান স্যারের ফ্যাক্সে পাঠান। আমি সেখানে যাচ্ছি আমার ফ্যাক্স নেই। তিনি বললেন সেখানেও তিনি পাঠাচ্ছেন। প্রজ্ঞাপনটি হাতে নিয়ে জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসানের সামনে বসেই সবার আগে চ্যানেল আই টিভিতে স্ক্রলে নিউজটি প্রদান করি। সেখানেই সেই ঐতিহাসিক নিউজের ছবিও তুলে রাখি। আমার কাছে মনে হয়েছে এই ছবি একদিন ইতিহাস হবে।
এরপর পুরো শহরে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। সিটি করপোরেশন শব্দটি আমাদের হয়ে যায়।
কুমিল্লা পৌরসভা থাকতে বছরে ৫/৬ কোটি টাকার বাজেট হতো এখন কত টাকার বাজেট তা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। ১৫৩৮ কোটি টাকার নতুন বরাদ্দের কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সিটি করপোরেশন না হলে এতো টাকা দেওয়া কারোই সম্ভব হতো না। ২০০৯ সালের এই ছোট্ট সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়ের মাথা থেকে আসা প্রস্তাবই আজকের কুমিল্লার চেহারা বদলে দিচ্ছে।
আবুল কাশেম হৃদয়
সম্পাদক
দৈনিক কুমিল্লার কাগজ