যুব
ক্রীড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, গত ১৬ বছরেই নয়;
অনেকে বলে থাকেন তিপ্পান্ন বছরে এদেশের উপরে শুধু ঝঞ্জাল জমা হয়েছে। আমরা
সেটি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। ৫৩ বছরের জঞ্জাল একদিনে এক মাসে কিভাবে
সমাধান করা যায় না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন,
ভারত এতদিন একটি দল, একটি সরকারের সাথে কথা বলেছে- সেটি হলো আওয়ামী লীগ।
এখন আর সে সুযোগ নেই। ভারতকে এখন কথা বলতে হবে এদেশের জনগণের সাথে। জনগণ
পররাষ্ট্রের নীতির ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেবে; সেটি এই সরকার বাস্তবায়ন
করবে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে বৈষম্য
বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ
করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র
সংস্কারের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা
বলেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ফেইসবুকে
একটা পোস্ট দিতে হলেও আমাদেরকে ১০বার ভাবতে হতো। গান গেয়েও অনেককে জেল
খাটতে হয়েছে। কবিতা লিখেও অনেককে জেল খাটতে হয়েছে। আজ আমাদের অন্তত এমন
শক্তি আছে যে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। কেই দরজায় এসে নক করছে না
র্যাব বলে, ডিবি বলে, পুলিশ বলে । আমরা আপনাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা
জানাতে চাই। যখন কোটা সংস্কারের দাবীতে আমরা আন্দোলন করছিলাম তখন
১১জুলাই কুমিল্লায় প্রথম আঘাত করা হয়েছিল। আপনারা প্রতিরোধ করে সারাদেশকে
শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। আপনাদের সেই প্রেরণাকে সাথে
নিয়ে আমরা সারাদেশে আন্দোলনকে আরো জোরদারভাবে গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। আপনারা
আমাদেরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে চেয়েছিলেন। আমরা
সেখানে গিয়েছি। আমাদের অভ্যুথানের যে স্পিরিট সেটাকে যেন সমুন্নত রাখতে
পারি এবং তা নিশ্চিত করতে পারে।
এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, সুমাইয়া আক্তার, হামযা মাহবুব,
জিয়া উদ্দিন আয়ান, আলী আহমেদ আরাফ, আবু রায়হান, তাছনিয়া নাওরিন, মহিদুল
ইসলাম রিন্তু, ফারিয়া রহমান,খালেদ হাসান এবং নাঈম আবেদিনসহ অন্যান্যরা
উপস্থিত ছিলেন।
মাহমুদ আরো বলেন, আসলে সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে আমাদের
জায়গা ছিল রাজপথ। সেই সচিবালয়ের অফিসে কিংবা কেবিনেট মিটিংয়ে ততটা
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না যতটা আপনাদের মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। গত আট
আগষ্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ প্রথবারের মত খোলা ময়দানে প্রথম কোন কর্মসূচীতে
আসলাম। যখন এই কর্মসূচীর আহ্বায়করা আমাকে বল্লেন তখন কে কি বলবে কিংবা
সরকারের জায়গা থেকে এখানে আসা যায় কিনা সে আকাংখা ব্যক্ত করিনি কিন্তু আজ
আপনাদের মাঝে এসে ভাল লাগছে। কিন্তু ইতিমধ্যে আমরা কিছু পরিবর্তন দেখতে
শুরু করছি। আপনারা কি গত ১৬ বছরে এমন কোন বন্যা পরিস্থিতি কিংবা দুর্যোগ
পরিস্থিতি দেখাতে পারবেন যেখানে ত্রাণ চুরির মত ঘটনা ঘটেনি। এবার কিন্তু
এধরনের একটা নিউজও আসে নাই। কেউ ত্রাণের চাল, ডাল, টাকা নিয়ে তার ঘরে মজুদ
করার মত ঘটনা ঘটেনি। আপনারা দেখছেন যে এয়ারপোর্টে আমাদের যে প্রবাসী
ভাইয়েরা আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন তাদেরকে কিভাবে লাঞ্চিত
করা হতো। তাদের লাগেজ আটকে রেখে তাদেরকে কিভাবে কষ্ট দেয়া হতো এখনকি আর
সেটা আছে? উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলে না। আপনারা দেখেছেন কিভাবে সরকারি
অফিস গুলো বিআরটিএসহ আরো বিভিন্ন অফিস যারা ছোট ছোট কাজের জন্য জনগনকে
ঘুরাতো, কষ্ট দিতো, ঘুরিয়ে তাদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করা হতো এখন কি কেউ এই
দৃষ্টতা দেখানোর সাহস দেখাচ্ছে? উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলে না।
সেটি আর
যেনো ভবিষ্যতেও কেউ আর দেখানোর সাহস না দেখায় তা নিশ্চিত করার জন্য তা
নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাঠামোগত সংস্কারের কথা বলছি। সেই কাঠামোগত সংস্কার
কিভাবে হবে সেটি আমরা ২১জন যারা সরকারের দায়িত্বে আছি তারা নির্ধারণ করবো,
সেটি নির্ধারণ করবেন আপনারা। আপনাদের বক্তব্যগুলো আমাদের কাছে পৌছানোর
জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরো ফ্লাট ফর্মে যারা আছে দেশের বিভিন্ন
স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তারা যাবেন এবং সেই বক্তব্যগুলো আমাদের কাছে
পৌছে দিবেন। আমরা তখন আসলে বুঝতে পারবো দেশ পুনর্গঠনের জন্য এবং রাষ্ট্র
সংস্কারের জন্য জনগনের রূপরেখাটা আসলে কি। আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই
আগামীর বাংলাদেশ তৈরি হবে জনগনের প্রণিত রূপরেখায়। আপনারা যেই রূপরেখা
দিবেন আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা কেবিনেটে বসে সেটি বাস্তবায়নের
দায়িত্ব পালন করে যাব। রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হয় ছাত্ররা এখন রাজনীতি করবে
কিনা। আমি মনে করি রাজনীতি করা এবং না করা এটি সকলের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত
এবং অধিকারের প্রশ্ন। কিন্তু রাজনৈতিক সচেতনতা সকলের মাঝে থাকা অত্যন্ত
জরুরী। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদিদের দ্বারা শাসিত হয়েছি শুধুমাত্র
রাজনৈতিক এ সচেতনতা না থাকার কারণে। আমরা শাসিত হয়েছি কারণ আমরা ৫ আগষ্টের
মত একবারো ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি । যখন মানুষ ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে
কথা বলতে শুরু করে তখনি বিভাজনকে উস্কেদিয়ে আন্দোলনকে নস্যাৎ করা হয়েছে
ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। আমি বিশ^াস করি যে জাতীয়
ঐক্য এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে আপনারা কুমিল্লায় সেটাকে সমুন্নত
রাখবেন। কুমিল্লা যেভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে সামনে থেকে এ আন্দোলনে
অবদান রেখেছে বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়েও ঠিক একই ভাবে আপনারা অবদান রেখে যাবেন।
গত দীর্ঘ সময় যে সরকার ছিল তাদের সাথে জনগনের ম্যান্ডেট না থাকায় তা ছিল
একটি নতজানু সরকার। অন্যান্য দেশ গুলোর সাথে যখন তারা কথা বলতো তখন মাটির
দিকে তাকিয়ে মস্তক নিচু করে কথা বলে আসতো। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই এদেশের
জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অন্য একটি রাষ্ট্রের
সাথে আমরা চোখে চোখ রেখে মাথা উচু করে কথা বলতে চাই মস্তক নিচু করে না।