কুমিল্লায় বন্যাকবলিত এলাকায়
খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ পৌঁছানোও জরুরি হয়ে পড়েছে। বন্যার
ভয়াবহতায় দুর্গতরা শারীরিক এবং মানসিক দুই ভাবেই ভেঙ্গে পড়েছেন। সামর্থ
থাকা সত্ত্বেও খাবারের অভাব এবং আপনজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা মানুষকে
বিমর্ষ করে দিচ্ছে। এদিকে দুর্গত এলাকায় নতুন বিপদ পানিবাহিত রোগবালাই।
বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে পানিবন্দি মানুষ এখন
চর্ম রোগ, ডায়রিয়া, জ¦র-সর্দিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাবারের
পাশাপাশি এখন ঔষদ ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ভাবিয়ে তুলছে ক্ষতিগ্রস্থদের।
অন্যদিকে সাপে কাটা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া কিংবা কাটা ছেড়ায় চিকিৎসা সেবা
নিয়ে সতর্ক থাকতে হচ্ছে তাদের।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.
মুহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়া ও
চর্মরোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছে, কিন্তু
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সকল এলাকায় যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য
সবাইকে নিজেরাই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। অন্তত খাবার আগে ও পরে ভালো ভাবে
সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
তিনি আরো জানান, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন
তারা গাদাগাদি করে এক জায়গায় অনেকেই থাকেন যে কারনে জীবানু ছড়িয়ে পড়ার
আশংকা থাকে। বন্যাপরবর্তী সময়ে রোগবালাইয়ের আরো প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।
সরেজমিনে
লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গত ১০
দিন যাবত এই গ্রামটি পানিতে বন্দি। খিলাবাজারের পাশর্^বর্তী এই গ্রামটিতে
নৌকা ছাড়া যাবার কোন উপায় নেই। কোথায় কোমর সমান, আবার কোথাও মাথার উপর
পানি। বাড়ি-ঘরের ভিটা কিছুটা উঁচুতে হওয়ায় অনেকে ঘওে পানি ঢুকা থেকে বেঁচে
গেলেও বেশির ভাগ মানুষেরই বাড়ি ঘর ডুবে গেছে। গ্রামটির দরবার শরীফ রাস্তায়
গিয়ে দেখা গেছে- এলাকাটি হাঁটু সমান পানির নিচে তলি। ছোট-বড় সবাই পানির উপর
ই সারাক্ষণ হাঁটা চলাফেরা। বাড়ির পাশে কাচা ল্যাট্রিন, গোসলাখানার সব পানি
আবার মিশছে রাস্তার পানির সাথে। আশেপাশের খাল ও পুকুরের পানিতে যাচ্ছে
রাস্তার পানি। দেখা গেছে, এই পাড়ার অনেক শিশুই চর্মরোগে আক্রান্ত। তাদের
হাতে পায়ে ছোট ছোট খোস-পাচরা। বড়দের পায়েও বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত, হাতে কালো
কালো ছোপের ক্ষত। সারাক্ষনই চুলকায় শরীরে আক্রান্ত এসব জায়গা। সেখানকার
বাসিন্দা সেলিনা আক্তার জানান, তার হাতে কালো কালো গোটা হচ্ছে। চুলকানোর পর
ছোপ ছোপ দাগ পড়ছে। শাহিনা বেগম জানান, তার দুই ছেলে এক মেয়ে সবার বয়স পনের
বছরের নিচে। সবার হাতেই খোস পাঁচড়া। ছোট ছোট হয়ে বের হয়ে এসব পাঁচড়া থেকে
আবার পানি বের হয়। বাইশ বছর বয়সি সালাউদ্দিন জানান, সারাদিন পানিতে কাজ
করতে হয়। আগে হাতে-চামড়ায় কিছু হয় নি। আজ কয়দিন হাতে-পায়ে চুলকায়। এরকম
অনেকেরই হাতে পায়ে হচ্ছে। এলাকার বয়স্ক শাহ আলম জানান, পানিবন্দি থেকে থেকে
শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কেউই ঘর থেকে বের হতে পারে না। ঘরের
মেঝেতেও পানি। বৃষ্টি হয়- রোদ উঠে না। কেউ কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, কেউ
চর্মরোগে। এখন পর্যন্ত কোন ডাক্তার দেখলাম না। ত্রানও দিতে কেউ আসলো না।
আমাদের এখানে খাবারও দরকার ওষুধ দরকার।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য
কর্মকর্তা নাজিয়া বিনতে আলম জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ
করছেন। কিন্তু কোথাও কোথও পানি এত বেশি যে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে আমরা
চেষ্টা করছি সবার কাছে পৌঁছানোর।
গোমতী নদীর পানির উচ্চতা কমে
বিপদসীমার নিচে আসলেও কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। গোমতীর
ভাঙ্গনে এখনো বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার এলাকার নতুন নতুন এলাকা
প্লাবিত হচ্ছে। এসব উপজেলায় প্রবাহিত হচ্ছে সালদা নদীর পানিও। এসব এলাকার
মানুষ জনও ভুগছে নানান রোগে। যারা পানিবন্দি হয়ে বাড়ি ঘরে আছেন তারা বেশির
ভাগই গ্যাসট্রিক ও বদ হজমের ঔষধ চেয়েছেন। টানা শুকনো খাবার খাওয়ার কারনে
অরুচিতেই ভুগছেন তারা। এছাড়া জ¦র ও সর্দিতেও ভুগছেন অনেক শিশু। মেয়েদের
স্যানিটারি ন্যাপকিনও চেয়েছেন অনেকে। এসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে
মেডিকেল ক্যাম্প করে সেবা দেয়া হচ্ছে।