কুমিল্লার
বুড়িচং অংশে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙ্গার পর এবার বাঁধ ভেঙেছে জেলার
ব্রাহ্মণপাড়া অংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সালদা নদীর। বুড়িচং অংশে গোমতির বাঁধ
ভেঙেছে উত্তর পাড়ে। অপরদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় সালদা নদী থেকে লোকালয়ে
পানি প্রবেশ করছে দক্ষিণ দিকে। দুই নদীর মাঝখানে প্লাবিত হচ্ছে দুই উপজেলার
শতাধিক গ্রাম। নদী ভাঙ্গনের সর্বোচ্চ ক্ষতির শিকার হয়েছে বুড়িচং উপজেলার
উত্তর-পূর্বের ৫টি ইউনিয়ন। আর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৮ ইউনিয়নের সব কটি
প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় দুর্গত
এলাকার সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার পথে। শুকনো খাবার খেয়ে
উঁচু জায়গায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রে কোন রকমে দিন যাপন করছে প্রায় লক্ষাধিক
মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে শিশু খাদ্য ও ওষুধের। পর্যাপ্ত নৌকা ও স্পিডবোট না
থাকায় মানুষজনকে উদ্ধার করতে পারছে না স্বেচ্ছাসেবীরা।
গতকাল খেলার
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চালদা নদীর ভাঙ্গনের ফলে নতুন করে প্লাবিত
হওয়া এলাকার মানুষজন বুড়িচংঘের সড়ক দিয়ে শহরের দিকে আসছেন। তারা বলছেন,
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এবং সড়কে পরিবহন চলাচল না করা ঘর থেকে কোন
মালামালী বের করে আনতে পারেননি। শুধু হাতে এবং মাথায় করে জানতে পেরেছেন তা
নিয়েই ঘর ছেড়েছেন।
একটু গরু নিয়ে শহরের দিকে রওনা হওয়া ইকবাল হোসেন
বলেন, আমি বাড়ি থেকে শুধু গরুটি নিয়ে বের হয়েছি। এটা গোমতী নদীর পাড়ের এক
আত্মীয়ের বাড়িতে রাখবো। পরিবারের অন্য সদস্যরা একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই
নিয়েছেন। সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী না থাকায় হেটেই আসতে হচ্ছে।
তার মতো আরো অনেককেই নিয়ে কালখারপাড় দিয়ে শহরের দিকে আসতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা
জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে বলা হয়েছে, বন্যার্তদের জন্য ত্রান মজুদ রহয়েছে।
পানি বেশি উচ্চতায় ওঠার আগেই বন্যার্ত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার
জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাঁধভাঙ্গার তৃতীয় দিনেও
সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিপুল পরিমান ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। তবে
বিভিন্ন স্থানে সঠিক ও সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের অভাবে স্বাভাবিকভাবে ত্রান বিতরণ
সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দূরদুরান্ত থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা
পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে একইস্থানে বারবার ত্রাণ বিতরণ করছেন । আবার অনেক
স্থানেসই এখনো ত্রাণ পৌছেনি বলেও খবর আসছে।
ক্ষতিগ্রস্থ বুড়িচং উপজেলার
শিকারপুর গ্রামের দেলোয়ারজানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থান জানা না থাকায়
দূরদূরান্তের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ ব্যক্তিগত পর্যায়ের অনেকেই অপেক্ষাকৃত
সুবিধাজনক অথবা চলার পথে যে আশ্রয় কেন্দ্রগুৃলো চোঁখে পড়ছে সেখানে ত্রাণ
সামগ্রী বিতরণ করে চলে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী
খান মোঃ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বাঁধ ভাঙ্গার পর থেকে বুড়িচংয়ের ৫টি ইউনিয়নের
অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সন্ধ্যায় এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি
গোমতীর পানি ধীরে ধীরে কমে আসছে বলে জানান। তবে ‘ঝুঁকিতে না’ এটা বলা
যাচ্ছে না।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিদা আক্তার নৌযান সংকটের
কথা স্বীকার করে জানান, অনেকেই প্রচুর পরিমান ত্রান সামগ্রী নিয়ে নৌযানের
কারনে দুর্গতদের মাঝে পৌঁছাতে পারছেন না। এঅবস্থায় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন
পরিষদ সচিব, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের
হাতে ত্রান হস্তান্তরের অনুরোধ জানান।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, ইতিমধ্যে জেলা ১৪ উপজেলা বন্যাকবলিত
হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গোমতি ও সালদা নদীর ভাঙ্গনের ফলে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলা প্লাবিত হয়ে যায়। দুর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
আরো ত্রাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।