চারদিকে পানি। তবুও সবাই পানির জন্যই
হাহাকার করছেন। অপেক্ষা করছেন কখন এক বোতল খাওয়ার পানি আসবে। কুমিল্লার
বুড়িচং উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় এই দৃশ্য এখন স্বাভাবিক।
শনিবার (২৪
আগস্ট) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, বন্যাকবলিত মানুষ,
স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গোমতীর
বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ওই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে
পানিতে আটকে পড়েছেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ।
আকস্মিক
বন্যায় আক্রান্ত এই এলাকার অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি। অনেকে
অবস্থান নিয়েছেন বাড়ির ছাদে। অনেকে গলাসমান পানি ডিঙিয়ে অন্যখানে না গিয়ে
বাড়িতেই রয়ে গেছেন। তেমনই একজন মানুষ ইছাপুরা গ্রামের গোলাম মোস্তফা। গত
দুই দিন পানিবন্দি তিনি।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পানিবন্দি হওয়ার পর কিছু
খাবার পেয়েছি; কিন্তু খাওয়ার পানি পাচ্ছি না। পানি না পেয়ে খুব কষ্ট
পাচ্ছি। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের চেয়ে খাওয়ার পানি বেশি জরুরি হয়ে
পড়েছে।’
উপজেলার শিকারপুর গ্রামের নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমার বাবা ও ভাই
তিন দিন ধরে একটি বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছেন। ভাই লিটন এক লিটার পানি নিয়ে
ছাদে উঠতে পেরেছেন। সেখানে খাবার ও পানি কিছুই অবশিষ্ট নেই। সর্বশেষ আজ
সকালে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এখন কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। তাদের মতো ওই
গ্রামের ৪০০-৫০০ মানুষ আটকে পড়ে আছেন।’
ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আসা
উদ্ধারকর্মী সোহরাব হোসেন শুভ বলেন, ‘দুই দিন ধরে বুড়িচংয়ের পীরযাত্রাপুর,
সাদেকপুর, আনন্দনগর, ইছাপুর, ষোলনলে ত্রাণ বিতরণ করছি। খাবার পানির সংকটে
মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থী
নাফিউর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব এলাকায় কাজ করছি তার বাইরেও অনেক এলাকা বাকি
থাকছে। আমরা যেখানেই যাচ্ছি সবাই পানি চাচ্ছেন। খাবার পেলেও পানির অভাবে
তা খেতে পারছেন না অনেকে। কিছু এলাকায় পানি পৌঁছায়নি। তবে আমরা সামগ্রিক যে
সমস্যা দেখছি তা হলো পানি। চারদিকে পানি আছে। কিন্তু খাবার পানির সংকট
খুবই বেশি। মানুষ পানি খেতে পারছে না। অনেকে সিদ্ধ করে নোংরা পানি খাচ্ছেন,
শুনেছি। এটি খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। কারণ এতে তারা অসুস্থ হতে পারেন। সবার
প্রতি অনুরোধ, বন্যাকবলিত এলাকায় আপনারা যারাই আসছেন, পানি নিয়ে আসুন। নৌকা
নিয়ে আসুন।’