কুমিল্লার
গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙার পর আবার গোমতির পাড়েই আশ্রয় নিয়েছে শত শত
পরিবার। বৃহস্পতিবার রাত বারোটায় বাঁধ ভাঙ্গার পর থেকে নদীর পাড়ে আশ্রয়
নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না ভাঙ্গন কবলিতে এলাকার মানুষের। গবাদি পশু,
হাঁস মুরগি ও অন্যান্য মালামালসহ এক ছাউনির নিচে বসবাস করছে এক একটি
পরিবার। হঠাৎ ভাঙ্গনের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। উপায়ান্তু না
দেখে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের উপরেই। শুক্রবার সকালে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া
এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুড়বুড়িয়া ও
আশপাশের গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাড়ি সংলগ্ন নদীর পাড়ে।
পাশের বিভিন্ন স্থানে বেঁধে রাখা হয়েছে শতাধিক গরু ও ছাগল। তার কাছেই
কোনরকম ছাউনি টানিয়ে বসবাস করছে এক একটি পরিবার। নদীর পাড়েবুড়বুড়িয়া থেকে
ভান্তি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলোর চোখে মুখে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক।
হঠাৎ ভাঙ্গনের মুখে পড়ে দিশেহারা তারা।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া গীতা রানী
বলেন, বাঁধ ভাঙ্গার খবর পেয়ে আমি দ্রুত আমার বাচ্চাকে নিয়ে পাড় উঠে আসি। ঘর
থেকে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। যা ছিল পানিতে ভেসে গেছে। তার ভাষ্য, যাদের
ঘরে শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধ মানুষ ছিলেন তারা কেহই ঘর থেকে কোন মালামাল নিয়ে
আসতে পারেননি।
মাঠে আশ্রয় নেওয়া শামসু মিয়া বলেন, আমাদের চিন্তায়ও ছিল
না গোমতী নদীর বাঁধ এদিক দিয়ে ভেঙ্গে যাবে। নদীর অন্যান্য স্থানগুলোতে ফাটল
ছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হঠাৎ শুনি আমাদের এদিক দিয়ে ভেঙে গেছে।
করে তাড়াহুড়ো করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নদীর পাড়ের উপর উঠে এসেছি।
এদিকে
গোমতীর ভাঙ্গনের পর তীব্র স্রোত ও পানিতে প্রায় তলিয়ে গেছে এসব এলাকার
ঘরবাড়ি। প্লাবিত হয়ে গেছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম।
সময় যত যাচ্ছে প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ও বাড়ছে। সেই সাথে ভেঙ্গে গেছে অনেক
স্থাপনা। অনেকেই আটকা পড়েছেন বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনায়।
ভাঙ্গন কবলিত
মানুষের উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করা স্বেচ্ছাসেবী জাবের হোসেন বলেন,
ভাঙ্গরের পর থেকেই গ্রামগুলোতে আমরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। ভাঙ্গন
কবলিত গ্রামগুলোতে এখনো পর্যন্ত অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের
বেশির ভাগই নারী ও বৃদ্ধ। তাদেরকে উদ্ধার করতে নৌকা ও স্পিডবোটের দরকার।
আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন।
কুমিল্লার
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পংকজ বড়–য়া বলেন, দুর্গত এলাকার সকল
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের
জন্য শুকনো খাবার স্যালাইন ঔষধ মজুদ আছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে।