সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
১০ চৈত্র ১৪৩১
‘আমার বাপজানের শেষ কথগুলো শুনতে পারি নাই’
ছবি হাতে কাঁদছেন রায়হান রাব্বির মা বাবা।
শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
প্রকাশ: শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪, ১১:২৯ পিএম |

‘আমার বাপজানের শেষ কথগুলো  শুনতে পারি নাই’ আমার বাপজানের শেষ কথাগুলো আমি শুনতে পারি নাই, মারা যাওয়ার দিন দুপুরে আমাকে ফোন করেছিল, আমি ফোন রিসিভ করতে পারি নাই। বিকালে কল ব্যাক করি কিন্তু রাব্বি ফোন রিসিভ করে নাই। সন্ধ্যার আগে আমারে ফোনে জানায় রাব্বিরে পুলিশ গুলি করছে, লাশ রাস্তায় পড়ে আছে। আহারে আমার ভালা পুতটারে পুলিশ ক্যামনে গুলি করে মারল! তার বুকটা গুলি করে ঝাঝড়া করে দিছে। এভাবেই শেষ মুহুর্তে ছেলের সাথে কথা বলতে না পেরে আফসোস করছেন পুলিশের গুলিতে নিহত রায়হান রাব্বির মা আয়শা বেগম। গত রবিবার (৪ আগষ্ট) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন চলাকালে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় রায়হান রাব্বি। রাত ১১ টার দিকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসি। পরদিন সোমবার (৫ আগষ্ট) জোহর নামাযের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।  

শহীদ রায়হান রাব্বি (১৯) দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের খয়রাবাদ গ্রামের মো.ফজর আলী ছেলে। ২০২৩ সালে খয়রাবাদ আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার পর ঢাকার খিঁলগাও এলাকায় ব্যবসা করতেন রাব্বি। চার ভাইয়ের মধ্যে রায়হান রাব্বি দ্বিতীয়।   

শুক্রবার (৯ আগষ্ট) সকালে রায়হান রাব্বির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মাটির তৈরী একটি ঘরে মাদরাসা পড়ুয়া রাব্বির ছোট ভাই মোসাব্বির হোসেন ভাইয়ের কোরআন খতম দিচ্ছেন। পাশের একটি টেবিলে সাজানোগুছানো আছে রাব্বির বইখাতা কলম। একটি চৌকিতে বসে মোবাইলে রাব্বির ছবি দেখে কাঁদছেন তাঁর মা আয়শা বেগম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ‘সোনার চাঁন আমারে ছাইড়া কেমনে চলে গেল’  মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে আমার শেষ দেখা হয়, আমি নিজের হাতে তারে খাওয়াইছি, পরে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় যায়। এর কয়েকদিন পর ঢাকায় আন্দোলন শুরু হয়। আমি ফোনে বলতাম বাবা তুমি এই আন্দোলনে যাইও না। আমাকে বলত ‘শত্রুর হাত থেকে দেশ মুক্ত করতে হবে’ আমারে নিয়ে চিন্তা কইরো না।          

নিহত রাব্বির বাবা মো. ফজর আলী বলেন, আমার চার ছেলের মধ্যে রাব্বি দ্বিতীয়। এই আন্দোলনে যদি আমার চার ছেলেই শহীদ হইতো আমার একটু ব্যাথা লাগত। তবে এর বিনিময়ে স্বৈরাচারীর থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে এটাই আমার কাছে আনন্দের। রাব্বি নিহত হওয়ায় এখন আমাদের মনে আর কোন কষ্ট নেই। রাব্বিসহ শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে এতেই আমরা খুশি। 
রাব্বির মামা শাহ জালাল বলেন, রাব্বি ছাত্রআন্দোলনে সক্রিয় ছিল। তাকে আমরা বাঁধা দিতাম কিন্তু শুনত না। মারা যাওয়ার দিন বিকালে কেউ একজন ফোনে আমাকে জানায়, রাব্বি পুলিশের গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। তাকে নিয়ে  যেতে। এই কথা শুনে আমি দিশা হারিয়ে ফেলি, কি করব বুঝতেছিলাম না। পরে আমি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়ে খিলগাঁও এলাকার একটি রাস্তা তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার ভাগিনা খুব মেধাবি ছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ বলে লেখা পড়ার পাশাপাশি ঢাকায় পাঞ্জাবি বিক্রি করত। 
এ বিষয়ে কুমিল্লার উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, ছাত্রআন্দোলনে দেবিদ্বার থেকে যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। সংগঠন থেকে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। রায়হান রাব্বির আত্মত্যাগ কখনই ভুলে যাওয়ার নয়। 

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের রায়হান রাব্বির নিহতের কথা আমি জানতে পেরেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। 












সর্বশেষ সংবাদ
মহাসড়কের কুমিল্লা রিজিয়নে থাকবে ৮ শতাধিক পুলিশ
কোন অবস্থাতেই অপকর্ম মেনে নেওয়া হবে না: হাজী ইয়াছিন
সাগরে নৌকাডুবি: নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
দল গোছাতে ঐক্যের বিকল্প নেই: জাকারিয়া সুমন
কুমিল্লায়খাদ্য সংকটে ভোগছে ১৫ হাজার এতিম শিশু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ডিসেম্বর পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহবান কায়কোবাদের
ধর্ষণে অন্ত:স্বত্ত্বা গৃহবধূ শ্বশুড় আটক
কুমিল্লায় সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
কুসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন
ঈদযাত্রায় ৮ কিলোমিটারে ভোগান্তির শঙ্কা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২