অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে যা ঘটলো কুমিল্লায়
|
কুমিল্লা রিজিয়নের হাইওয়ে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান,
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় বিক্ষুব্ধরা হাইওয়ে পুলিশ
ফাঁড়িতে আগুন দেয় এবং গাড়ি ভাঙচুর চালায়। এ সময় সেখানে আটকে পড়া অন্তত ৩০
জন পুলিশ সদস্য ফাঁড়ির ছাদে আশ্রয় নেয়। পরে তাদেরকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে
নিরাপদে আনা হয়। এর মাঝেই এরশাদ নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে
পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জানা গেছে, হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশ ফাঁকা গুলি
ছুঁড়েও লাভ হয়নি। ফাঁড়ির রেকার, পুলিশের গাড়িসহ তিনটি গাড়ি ভংচুর ও আগুন
দেয়া হয়। জানা গেছে, সকাল থেকে দাউদকান্দি- ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন
স্থানে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা।
এসময় তারা মহাসড়কে যান চলাচল থামিয়ে দেয়। এছাড়া শহিদনগর এলাকায় সংঘর্ষ
ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। দাউদকান্দি এলাকায়ও আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষের
ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ওপর হামলা ও হাইওয়ে থানায় হামলার চেষ্টা করা হয় এসময়।
দাউদকান্দিতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে রবিবার
দুপুরে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বুড়িচং এলাকার নাজিরা বাজার এলাকায়
আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকার দিকে আসতে শুরু করে।
এসময় আলেখারচর এলাকায় আসলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বাঁধার মুখে পড়লে
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গোালগুলি ও লাঠিচার্জের মুখোমুখি হয়ে
আন্দোলনকারীরা আবারো সেনানিবাস এলাকার সামনে মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেয়। পরে
সেখান থেকে তারা আবারও একত্রিত হয়ে আলেখারচরের দিকে এগুনোর চেষ্টা করা হয়।
ঠিক একই সময় ময়নামতি সেনানিবাস থেকে কয়েকটি সাঁজোয়া যান শহরের দিকে যাবার
সময় আন্দোলনকারীরাও তাদের সাথে এগিয়ে যান। তবে সাঁজোয়া যানগুলো মহাসড়ক থেকে
শহরের সড়কে প্রবেশ করে এগিয়ে গেলে আন্দোলনকারীর কোটবাড়ি বিশ্বরোডের দিকে
যেতে আবারও বাঁধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা। জানা গেছে, আলেখারচর এলাকা
সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দুপুরে কোটাবড়ি বিশ্বরোড এলাকায় আন্দোলনকারীরা আসতে চাইলেও বাঁধার
মুখে পড়ে। আওয়ামীলীগ- যুবলীগের নেতাকর্মীদের গুলি ও ধাওয়া খেয়ে তারা
ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সংঘর্ষে আলেখারচর পুলিশবক্স ও একটি ভবনের কাচের দেয়াল
ঢিল ছুঁড়ে ভাংচুর করা হয়। অপরদিকে কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামীলীগ ও
অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৩০জন। নিহত
যুবক আবদুর রাজ্জাক রুবেল দেবিদ্বার উপজেলার বাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন
মিয়া। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আলী এহসান বিজয়
বলেন, রুবেল নামে একজন হাসপাতালে মারা যায়। এছাড়া ১২ জন আহত রোগি ভর্তি হয়।
এর মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।দেবিদ্বারে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি প্রাইভেটকারেও আগুন দেয়া হয়। উপজেলার ভিরাল্লা এলাকয় মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়। এছাড়া ব্রাহ্মণপাড় উপজেলাতে বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা। অন্যদিকে
সংঘর্ষের সময় ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকায় আহত হওয়া অজ্ঞাত এক যুবক
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেছে। আনুমানিক ২০ বছর বয়সী নিহত যুবকের কোন
পরিচয় পাওয়া যায়নি।কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ শেখ ফজলে রাব্বি জানান, রোববার বিকাল তিনটায় আহতবস্থায় ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে কয়েকজন যুবক ভর্তি হয়। ওই সময় তাদের সাথে আহতবস্থায় ওই যুবককেও নিয়ে আসা হয়। গুরুতর আহত ওই যুবককে আইসিউতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকাল সাড়ে তিনটায় মারা যায়। নিহত যুবকের কোন পরিচয় আমরা সনাক্ত করতে পারিনি। নিহতের মাথায় ও পায়ে কোপের আঘাত রয়েছে। তিনি আরো জানান, সোমবার বিকাল পযন্ত এ হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩২ জন রোগি ভর্তি হয়। |