বিক্ষোভে উত্তাল কুমিল্লা
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলির অভিযোগ, গুলিবিদ্ধসহ আহত অন্তত ৩০
কুমিল্লার কাগজ রিপোর্ট:
|
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে
থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ফৌজদারি হয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে যাচ্ছিলেন
শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পুলিশ লাইন্স এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে যুবলীগ,
স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দেন। এ সময় বেশ কয়েক
রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ এবং অন্তত ২০ জন আহত হন।
পরে সেখান থেকে আহত ও গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতাল,সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান
আন্দোলনকারীরা। হামলা ও ধাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর
আগে নগরীর পূবালী চত্ত্বর এলাকায় জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে শুরু
করলে সেখানেও ধাওয়া দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগিতা সংগঠনের
নেতা-কর্মীরা। ধাওয়ায় তাদের মিছিলটিও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ ছাড়াও নগরীর রাণীর দিঘির দক্ষিণ পাড় এবং বাগিচাগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মারধর ও গুলি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাগিচাগাঁও ও পুলিশ লাইনস এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও এ সময় হকিস্টিক, লাঠি ও স্টাম্প দিয়ে হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে সংঘর্ষের পর কুমিল্লায় কয়েকজনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাইদুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- সংঘর্ষে কুমিল্লায় কেউ মারা যায়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটানো হচ্ছে। পুলিশ ছাত্রদের নিরাপত্তা দিয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ লাইনে আটকে পড়া প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থী-অভিভাবককে নিরাপত্তা দিয়ে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দায় অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন সাংবাদিকদের বলেছেন- আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা জামায়াত-বিএনপিকে প্রতিহত করতে মাঠে ছিলেন। তাঁরা কোনো শিক্ষার্থীকে আঘাত করেননি। হাসপাতালে ভর্তি আহত শিক্ষার্থীরা: কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি চলাকালে হামলায় গুরুতর আহত ৬ জন শিক্ষার্থী কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিন আছেন। তারা হলেন- কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আরফান মজুমদার (১৬), কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সৌরভ চক্রবর্তী (২৫), ঢাকার সফিউদ্দিন স্কুলের শিক্ষার্থী মারুফ (১৬), কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আসিফ (১৮), কুমিল্লা নগরীর ঠাকুর পাড়া এলাকার শাহাদাত হোসেনের পুত্র মৃদুল (১৭), টমসনব্রিজ এলাকার ইউনুস মিয়ার পুত্র সুজন (১৮)। তাদের মধ্যে সৌরভ চক্রবর্তীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লায় কর্মসূচি চলাকালে হামলায় মোহাম্মদ রাফি (২২) নামে একজন আহত হয়েছেন। এই বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, হাসপাতালে কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তাঁদের চিকিৎসা দিচ্ছি। এর মধ্যে সৌরভের চোখের আঘাত গুরুতর। তাঁকে ঢাকায় চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল কর্মসূচি চলাকালে হামলায় আহতদের মধ্যে অন্তত ৬ জন কুমিল্লা সদর হাসপাতালেচিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আবদুল করিম। তিনি বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা ৬ জনের মধ্যে দুইজন ছড়রা গুলিবিদ্ধ। তবে সবাই আশঙ্কামুক্ত। এসিল্যান্ড ও মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন: শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে জেলার চান্দিনায় উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় কাঠেরপুর এলাকায় পৃথক এ দুটি ঘটনা ঘটে। এসময় এসিল্যান্ড সৌম্য চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন গাড়িটির ভেতরেই ছিলেন। বিক্ষুব্ধরা আগুন লাগিয়ে দিলে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে যান তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনজুর মোর্শেদ বলেন, শনিবার দুপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন শেষে এই ঘটনা ঘটে। জানতে চাইলে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) সৌম্য সরকার বলেন, তাদের কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে আমরা গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলাম। এসময় পিছন থেকে গাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। তখন আমরা তারাহুড়া করে গাড়ি থেকে নেমে রক্ষা পাই। এসময় গাড়িতে তিন কর্মচারী ছিলেন। অন্য একটি গাড়ীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তিনিও গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে নিরাপদে যান। বিকেল তিনটার দিকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে কিছু দুস্কৃতকারী গাড়িটিতে আগুন দেয়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। |