কোটা
সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
সমন্বয়কারীরা। শনিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নাহিদ ইসলাম তার ফেইসবুক
আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে
বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে। যখন সময় ছিল তখন
সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার
হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দিদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায়
যাব না।”
এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। ওটা দেখুন।”
এর
আগে সকালে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান
পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসার আগ্রহ
প্রকাশ করেন।
সেখানে তিনি বলেন, “গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।”
এর
প্রতিক্রিয়ায় নাহিদ ইসলাম তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেন, “১৯ জুলাই আমরা
কারফিউ ভঙ্গ করে শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। “আমাদের সে
বক্তব্য কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয় নাই। সে রাতে আমাকে তুলে নিয়ে
গিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয় এ ঘোষণার জন্য এবং আন্দোলন প্রত্যাহার ও
সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য জবরদস্তি করা হয়।
“ছাত্রজনতা
শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল৷ সরকার দমন-পীড়ন করে সেটিকে সংঘাত ও
সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে শত শত মানুষকে
হত্যা করা হয়েছে। এবার এরকম পরিস্থিতি হলে কারো জন্যই পরিণতি ভালো হবে না।”
ডিবি
কার্যালয় থেকে তাদের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা
হয়েছিল উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “আমাদের অনশন ও রাজপথে আন্দোলনের কারণে সে
পরিকল্পনা সফল হয়নি।
“আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত
রাখতে চাই। আমরা কোনো সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও প্রাণনাশ চাই না৷ নিরাপত্তা
বাহিনীকেও এরজন্য সহযোগিতা করতে হবে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রাজপথে দেখা গেলে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর দায়ভার নিতে হবে। তবে রক্ত ঝরলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা
হবে। আমরা ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। গণজোয়ার
তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের দমন-পীড়ন, প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্র করে এ আন্দোলন
থামানো যাবে না।”
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদও ফোইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
তিনি
লিখেছেনন, “খুনি সরকারের সাথেই কোনো প্রকার সংলাপে বসতে আমরা রাজি নই,
সেখানে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনার প্রশ্নই উঠে না। তাদের সাথে
আলোচনার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, তাদের
কোনো বক্তব্য থাকলে দেশবাসীর সামনেই মিডিয়া মারফত তা রাখতে পারেন।
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। গুলি আর সন্ত্রাসের
সাথে কোনো সংলাপ হয় না।”
আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, “যখন আমরা ডিবি অফিসে
বন্দি ছিলাম তখনই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আন্দোলন স্থগিত করতে বলা
হয়। এমনকি জোর করে গণভবনে নিয়া যাওয়ার পরিকল্পনাও চলছিল। এই প্রস্তাবের
প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে আমরা অনশনে বসেছিলাম।
“আপোষহীনতার মূল্য যদি
মৃত্যুও হয় তাও পরিশোধ করতে প্রস্তুত আছি। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ আহ্বান করছি।”