নিজস্ব
প্রতিবেদক: ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ (আমাদের নায়কদের স্মরণ) কর্মসূচিতে
কুমিল্লায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দালনকারীদের কর্মসূচি পালনের চেষ্টা দেখা
গেছে। প্রকাশ্যে অপ্রকাশে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি- শ্লোগান অংকন, ৯ দফা
দাবি সম্বলিত লিফলেট সাঁটানো ছাড়াও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজসহ
কয়েকটি জায়গায় সামনে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির খবর
পাওয়া গেছে। এছাড়া সারাদেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে
শিক্ষার্থী হত্যা-নিপীড়ন এবং শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন
করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষক। সারাদেশে হত্যা ও লাঞ্চনার
বিচার ও শাস্তি দাবি ছাড়াও, বৃহষ্পতিবার সকালে মানবন্ধনে অংশ নিতে কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময় বাঁধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ করেন তারা। এদিকে
ফেসবুকে নামে-বেনামে পেইজ খুলে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো যেন বন্ধ হয় সেজন্য
অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ খুলে সে টি অনুসরন করার আহ্বান জানিয়েছেন কুমিল্লার
সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা
গেছে, ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ (আমাদের নায়কদের স্মরণ) কর্মসূচি পালন
করতে বৃহষ্পতিবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল সরকারি কলেজের সামনে বিকালে
জড়ো হয় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মাথায় ও মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিলো।
এসময় তারা কলেজের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। উপস্থিত নির্বাহী
ম্যাজিষ্ট্রেট ফরিদুল ইসলাম এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সেখান
থেকে ফিরিয়ে দেন। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফরিদুল ইসলাম জানান, কয়েকজন
শিক্ষক কর্মসূচি পালন করতে আসে, তাদেরকে আমরা বুঝানোর পর তারা চলে যায়।
যতটুকু বুঝা গেছে তারা নবম, দশম ও একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। বেশির ভাগই
স্থানীয় বাসিন্দা।
এ সময়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বিজিবি সদস্যদের সেখানে উপস্থিত দেখা যায়।
বৃহষ্পতিবারও
কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন দেয়ানে নতুন নতুন দেয়াল লিখন দেখা গেছে। কুমিল্লা
জিলা স্কুল, পৌর পার্ক, শিল্পকলা একাডেমির দেয়ালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের
শ্লোগান আঁকা দেখা যায়। তবে কারা কখন এই শ্লোগান এঁকেছে এ ব্যাপারে তথ্য
পাওয়া যায় নি। এর দুই দিন আগে কুমিল্লা নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয়ের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা হয়। কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে সে সময় দেয়াল
থেকে শ্লোগান মুছেও দেয়া হয়। শ্লোগান লেখার সময় দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে
কুমিল্লা সিটি মেয়র তাহসিন বাহার তাদেরকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠান বলে জানা গেছে।
দেশব্যাপী
শিক্ষার্থী হত্যা- নিপীড়ন ও শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। বৃহষ্পতিবার বেলা
১২টার দিকে নিপীড়নের প্রতিবাদে ওই ৬ শিক্ষক হাতে লেখা ফেস্টুন নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই মানবন্ধন করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত
ছয় জন শিক্ষক হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শিলা,
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন, গণযোগাযোগ ও
সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম৷ একই বিভাগের
শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক জয় রাজ বংশী, বাংলা
বিভাগের প্রভাষক গোলাম মাহমুদ পাভেল।
তবে মানববন্ধনে অংশ নিতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আসতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা
শিক্ষকদের বাঁধা দেয়া এবং ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগও করেছেন শিক্ষকরা। কুমিলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'একজন
শিক্ষক জানিয়েছিলেন যে উনি আসতে পারছিলেন না। সাথে সাথে আমি আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে জানিয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব ক্যাম্পাসের ভিতরে। বাইরে যদি
কোন ঘটনা ঘটে সেটার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হয়। সেটা
আমরা করেছি।'
সদর দক্ষিন থানার অফিসার্স ইনচার্জ আলমগীর ভূইয়া বলেন,
সরকার দলীয় লোকেরা শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসতা বাধা দিচ্ছে এই ব্যাপারে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি একটু আগে ঘুরে
আসলাম এমন কিছু লক্ষ্য করি নাই'।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সাকিব হোসেন জানান, বৈষম্যেবিরোধ ছাত্র
আন্দোলন আমরা(কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) আমাদের যৌক্তিক এ আন্দোলন পড়েছে
কুমিল্লার শহর থেকে গ্রামের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। যার ফলশ্রুতিতে, কুমিল্লা
জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে(দেয়য়ালিকা,
চিত্রাঙ্কন, বিক্ষোভ মিছিলসহ) তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তার মধ্যে-
কুমিল্লা জিলাস্কুল ,কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজের, ইস্পাহানি পাবলিক
স্কুল এন্ড কলেজ, ময়নামতি ইংরেজি স্কুল এন্ড কলেজ, ফকির বাজারসহ উপজেলা
উপজেলায় কর্মসূচি পালিত হয়েছে।আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষা- শ্রেণী কার্যক্রম নিয়ে নানান পেইজ থেকে
বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে- এমন তথ্যকে সামনে রেখে প্রতিটি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব তথ্য ও সুস্পষ্ট বিবৃতি প্রদানের জন্য নিজস্ব
অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়া জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা
প্রতিরোধ কমিটির সভা থেকে। যে কারনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ তাদের
নিজস্ব ফেসবুক পেইজ খুলে সেটিকে অনুসরন করার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যক্ষ
প্রফেসর ড. আবু জাফর খান।