চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমেই আরো
ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশের নানামুখী
উন্নয়নকাজে চীনের সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে। নিকট ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরো
শক্তিশালী হবে, তারই আভাস পাওয়া যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সাম্প্রতিক চীন সফরে।
গত বুধবার বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে গ্রান্ট বা সহায়তা, সুদমুক্ত ঋণ, কনসেশনাল
বা ছাড়যুক্ত ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ-বাংলাদেশকে এই চার ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার
প্যাকেজ দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
চীনের প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ
রোহিঙ্গার মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে এবং প্রয়োজনে আরাকান আর্মির সঙ্গেও কথা বলবেন
বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াং বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন চীনা মুদ্রা আরএমবি (প্রায় এক হাজার ৬১৫ কোটি টাকা) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই
সফরে ২১টি দলিল সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। দলিলগুলোর মধ্যে দুটি সমঝোতা
স্মারক (এমওইউ) নবায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরো সাতটি প্রকল্প ঘোষণা করা
হয়েছে। চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ে চিঠি
বিনিময় করেছে দুই দেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি
ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মূলত রোহিঙ্গা
ইস্যু, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বেইজিংয়ের
সাংগ্রিলা সার্কেলে চীনের ওয়ার্ল্ড সামিট উইংয়ে ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে
বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে চীনা ব্যবসায়ী ও
উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চীনের
সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ অঞ্চলে চীনের পণ্য
আমদানির বড় ক্রেতা বাংলাদেশ, যদিও বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রপ্তানির
ক্ষেত্রটি খুব একটা গতিশীল নয়।
চীন বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার
হলেও দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ২০২২ সালে চীনের বাজারে
৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে
পারছে না।
চীন বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং
বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে
উন্নীত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের
কাতারে যাওয়া। এই বাস্তবতায় দেশ দুটির মধ্যে পারস্করিক সহযোগিতার
সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
বাংলাদেশের উন্নয়নকে অভূতপূর্ব বর্ণনা করেছেন। বাংলাদেশে চীনা সহায়তা
অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন। শি চিনপিং বলেছেন, ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে সম্পর্ককে দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করে এ
উদযাপনকে অর্থবহ করতে তাঁরা প্রস্তুত।
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা
বজায় রেখে যেসব আঞ্চলিক ও পারস্করিক উদ্যোগ রয়েছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে নিতে
হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হোক।