করোনাভাইরাসের
নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ডা. সাবরিনা
শারমিন হুসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ আরও ছয়জনকে আসামি
করা হয়েছে।
সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেছেন
দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ
কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৬৮/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- জেকেজি হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
(এমডি) আরিফুল চৌধুরী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের স্টাফ আ স ম সাঈদ চৌধুরী,
হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু, তানজিনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের
স্বত্ত্বাধিকারী জেবুন্নেসা রিমা। ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের
রেজিস্ট্রার ছিলেন, বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত।
আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মহাপরিচালকের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ
কোভিড মহামারীর সময় নি¤œমানের মাস্ক, পিপিই ও লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ
রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ২০২০
সালের ২১ জুলাই পদত্যাগ করেন। পরে ওই বছরের ২৩ জুলাই তার চুক্তিভিত্তিক
নিয়োগ বাতিল করার কথা জানায় সরকার।
মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা.
সাবরিনা বলেন, “জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কাগজে-কলমে কোথাও আমার নাম নেই।
আর আমার তো কোনো সম্পদই নেই, এমনকি ঢাকা শহরেও আমার কোনো জায়গা-জমিও নেই।”
এর
আগে ২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার
অভিযোগে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনার স্বামী
আরিফুল চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
সেসময় বলা
হয়, জেকেজির কর্ণধার আরিফুল-সাবরিনা দম্পতি করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার
ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনি¤œ
পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি নিতেন ১০০ ডলার। ওই
সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায়
আগেই আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ওই বছরের ৫
অগাস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ওই বছরের ২০
অগাস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়
আদালত। ২০২২ সালের ১৯ জুলাই কোভিডের জাল সনদ দেওয়ার মামলায় সাবরিনা ও তার
স্বামী আরিফুলসহ ছয়জনকে ১১ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।
ওই মামলায় বর্তমানে
উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত আছেন সাবরিনা। দুদকের দায়ের করা
মামলার এজাহারে বলা হয়, অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য ও বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা
যায়, সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের
রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশ্য এবং কর্তৃপক্ষের বিনা
অনুমতিতে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামক একটি লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের
চেয়ারম্যান পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
তিনি স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অন্যান্যদের যোগসাজশে অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন,
ট্রেডলাইসেন্সবিহীন তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপের নাম সর্বস্ব
প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমতি
পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।
এক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত
অনুমোদন ছাড়াই নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে আরও দেখা
গেছে,সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুলের নির্দেশে তার অফিসের কর্মীরা কোন
পরীক্ষা না করেই ভুয়া ও জাল রিপোর্ট তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ
সংগ্রহ ও আত্মসাৎ করেন।’
এছাড়া ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন
লকডাউনের মধ্যে মাত্র ৩ মাসে ওভাল গ্রুপ এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভেলবিল
সিকিউরিটি সার্ভিসেসের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ষোল লাখ নব্বই হাজার
সাত টাকা জমা হয়, যা কোভিড পরীক্ষার টাকা বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের বিষয়ে অভিযোগ, তিনি
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে নিবন্ধনবিহীন জেকেজি হেলথ কেয়ারকে
স্যাম্পল সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মামলার
তদন্তে আরও কোনো বিষয় বা অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে আনা হবে
বলেও এজাহারে বলা হয়েছে।