এবার
 সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড ঘোষণা করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। বুধবার (১০
 জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ 
করে ‘বাংলা ব্লকেড’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) 
সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই 
ঘোষণা দেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা সাংবাদিকদের জানান, আজ 
দেশের বিভিন্ন জায়গার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণসংযোগ করেছেন তারা। আদালতের 
নির্দেশের বাইরেও তারা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস চান
 কোটা সংস্কারের বিষয়ে। এ কারণে তারা বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড পালনের 
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ 
ইসলাম বলেন, আমরা যে আন্দোলনে নেমেছি, সেজন্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি 
হচ্ছে। আমরাও এই ভোগান্তি চাই না। আর এই ভোগান্তির জন্য সরকারকে দায় নিতে 
হবে। কোটার এই ইস্যুতে আমরা মনে করি সরকার ও নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ 
করার এখতিয়ার আছে।
কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, বুধবার থেকে 
সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি থাকবে। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে ব্লকেড 
কর্মসূচি চলবে। সড়ক ও রেলপথ ব্লকেডের আওতাভুক্ত থাকবে। সাংবাদিক ও জরুরি 
সেবার পরিবহনগুলো এই ব্লকেড কর্মসূচির আওতায়মুক্ত থাকবে।
আরেক সমন্বয়ক 
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলনটি চালিয়ে যাচ্ছি এটি কোটা বাতিলের 
আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন হচ্ছে বাস্তবতার আলোকে ন্যায্যতার পর্যায়ে কোটা
 সংস্কার করা। আমরা বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, আমরা 
মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী কিনা। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করছি না, 
আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমরা 
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের কোটার বিরোধিতা করছি।
ন্যূনতম কোটা রাখা 
নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি কোটা শুধু 
প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের ক্ষেত্রে 
প্রযোজ্য হতে পারে। আমরা ৫ পার্সেন্ট কোটা যৌক্তিক বলে বিবেচনা করছি। 
আমাদের মূল দাবি হলো নির্বাহী বিভাগের কাছে।
সকালে দুই শিক্ষার্থীর 
দায়ের করা রিটের বিষয়ে সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, এটি আমাদের আন্দোলনের কোনও
 অংশ নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজেদের ব্যক্তিগত 
আগ্রহের জায়গা থেকে এই রিট করেছেন। আমরা তাদের এই রিট সমর্থন করছি। তবে এটি
 আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
রিটের রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, 
রিটের রায় যাই হোক না কেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। নেতিবাচক 
সিদ্ধান্ত এলে তো কোনও কথাই নেই, আন্দোলন চলমান থাকবে। আর যদি ইতিবাচক আসে,
 যদি আমাদের পরিপত্র বা লিখিত কোনও ডকুমেন্টের মাধ্যমে আশ্বস্ত করা হয় যে 
কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে, তবে আমরা আন্দোলন ছেড়ে 
ক্লাসে ফিরে যাবো আনন্দ মিছিল করতে করতে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ 
অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে 
বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই
 প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড 
কাউন্সিলের সাত সদস্য ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এই রিটের 
চূড়ান্ত শুনানিতে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির 
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর
 ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৪ জুলাই 
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি 
চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের 
সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ 
দেন।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামের 
শিক্ষার্থীরা। ৭ ও ৮ জুলাই তারা দুপুরের পর থেকে রাত ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত 
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি 
পালন করেন।
                                                                                
