দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের।
রোগীদের প্রতি চিকিৎসকরা মনোযোগী নন, এমন অভিযোগও শোনা যায়। গ্রামাঞ্চলের
বেশির ভাগ মানুষ এখনো বড় বড় শহরের আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
আবার প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসকও নেই।
নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্য জনবলেরও
একই অবস্থা। রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। গত ফেব্রুয়ারি মাসে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানান, দেশে প্রতি ৯৯০ জনের জন্য সরকারি ও
বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মাত্র একটি শয্যা রয়েছে। ২০২২ সালের হেলথ
বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৭১ হাজার ৬৬০
এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৯৯ হাজার ৯৭৫।
বর্তমানে দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্নাতক ডিগ্রিধারী ডাক্তার আছেন ২৯ হাজার ৫৬১ জন।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রোগী দেখার জন্য তিন মিনিটের বেশি সময় দিতে
পারেন না চিকিৎসকরা। সামান্য অসুখেও কমপক্ষে দুইবার যেতে হয় চিকিৎসকের
কাছে। সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও বেসরকারি
হাসপাতালের দুটি প্রাইভেট চেম্বারে যাওয়া রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে
তিনি দেখেছেন লম্বা লাইনে শতাধিক মানুষ টিকিট নিচ্ছে। মেডিসিন বিভাগে
অপেক্ষায় আরো দুই শতাধিক চিকিৎসাপ্রত্যাশী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা
পর্যন্ত হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের সামনে অপেক্ষা করে তিনি দেখেছেন,
নির্দিষ্ট কক্ষের সামনে লাইনে থাকা প্রথম ১০ জন রোগীকে ৩০ মিনিটের কম সময়ে
সেবা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের তথ্য
অনুযায়ী, বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন চার হাজার ২০০ জন রোগী আসে। সেবা দেন
কমবেশি ৬০ জন চিকিৎসক।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে
একজন চিকিৎসক গড়ে ১০০-র বেশি রোগী দেখেন। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই রোগীরা
সময় কম পান। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও খুব সুখকর নয়। রাজধানীর
একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রতিবেদক দেখেছেন, সেখানেও একজন রোগীকে
বিশেষজ্ঞরা তিন মিনিটের বেশি সময় দেন না।
একজন রোগীর জন্য কতটুকু সময়
প্রয়োজন, এটা নির্ভর করবে অসুস্থতার ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের নিরাপদ ও
কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে রোগীর বেশি সময় দরকার চিকিৎসকের কাছ
থেকে। যে ধরনের রোগীই হোক না কেন, দু-এক মিনিটে চিকিৎসাসেবা হবে না। তার
রোগ নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা—কোনোটাই এত কম সময়ে ভালোভাবে সম্ভব নয়।
একজন
চিকিৎসক কতজন রোগী দেখবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। কয়েক মাস আগে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে, সেখানে
একজন চিকিৎসক কতসংখ্যক রোগী দেখতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
কাজটি দ্রুত করা হোক।