কোটা
সংস্কার ও ২০১৮ সালের মেধাভিত্তিক নিয়োগের সরকারি পরিপত্র পুনর্বহালের
দাবিতে রবিবার (৭ জুলাই) সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ব্লক করার ঘোষণা
দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে
শাহবাগ মোড় অবরোধকালে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান এই ঘোষণা দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে
চলে যান।
অবরোধের সমাপনী বক্তব্যে নাহিদ হাসান বলেন,আমরা প্রশাসনের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা আমাদের বাধা দেবেন না। বাধা দিলে তা ভালো হবে
না। আমাদের চাকরি না থাকলে আপনাদের চাকরিও থাকবে না। আমরা অভিভাবকদের প্রতি
আহ্বান জানাই, এই আন্দোলন শুধু আমাদের আন্দোলন না, এই আন্দোলন আপনাদেরও
আন্দোলন। আপনাদের সন্তান চাকরি না পেলে আপনাদেরও ভোগান্তি হবে। তাই আমাদের
আন্দোলনে আপনারা সহযোগিতা করুন।
আন্দোলনের সমাপ্তি টেনে নাহিদ হাসান
বলেন, আগামীকাল বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লক’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।
আগামীকাল সারা দেশে প্রতিটি মোড়, প্রতিটি সিগনাল ব্লক করা হবে। সারা দেশের
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি ব্লক কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান।
এর
আগে শনিবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। তাদের অবস্থানের কারণে এ সময়
সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর সড়ক, মতিঝিলের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে
তীব্র জানযটের সৃষ্টি হয় শাহবাগ মোড় এলাকায়। যান চলাচল বন্ধ থাকায়
যাত্রীদের অনেকেই হেঁটে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হয়।
এর আগে দুপুর ৩ টার
দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও
বিভাগ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন
শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি
থেকে শুরু হয়ে মুহসিন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের মোড় হয়ে
বকশিবাজার, পলাশী থেকে আজিমপুর হয় আবার নীলক্ষেত থেকে রাজু ভাস্কর্য হয়ে
শাহবাগে গিয়ে রাস্তা আটকে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ সময়
শিক্ষার্থীরা, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা
বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর
আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে
আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে
থাকেন।
আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে– ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল
সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে কোটা
পুনর্বণ্টন বা সংস্কার; চাকরির পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের
সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা
অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র
নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে
সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে
বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে ছাত্রলীগসহ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা পরে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর
সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা
পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে ২০২১ সালে
ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড
কাউন্সিলের সদস্যরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে
২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং পরিপত্র কেন আইনগত
কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- সে বিষয়ে জানতে চান।
গত ৫ জুন
(২০২৪) সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা
পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল
থাকবে বলে আদেশ দেন।
৯ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের
দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে গত ৪ জুলাই প্রধান
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশ দেন,
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের
সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল থাকবে। পূর্ণাঙ্গ রায়
প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আদালত।
পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।
এদিকে আপিল বিভাগের আদেশের আগেই গত ২ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।