সরকারি
চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের আদর্শ সদর উপজেলার
কোটবাড়ি এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা। চারটি দাবি জানিয়ে তিন ঘন্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফিরে যায় আন্দোলনরত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার
(৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের
উপস্থিতিতে তারা মহাসড়কে অবরোধ ছাড়ার ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের চারটি দাবি
হলো- ২০১৮এর পরিপত্র পুনঃবহাল করতে হবে, প্রতিবন্ধী ও উপজাতী কোটা ছাড়া ১ম
থেকে ৪র্থ শ্রেণীর সকল চাকরীতে সকল প্রকার কোট বাতিল করতে হবে, অতিবিলম্বে
হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহার করতে হবে, উল্লিখিত দাবীসমূহ মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী বরাবর পৌছে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের
পক্ষ থেকে ১০/১২ জনের একটি দল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা
দিয়ে আসেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ১২টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ৩টা ৩০ মিনিট
পর্যন্ত ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে হাইকোর্ট কর্তৃক দেওয়া প্রজ্ঞাপন অবৈধ
ঘোষণার প্রতিবাদে ও প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ
মিছিল করেন ও মহাসড়ক সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
এসময় তারা 'লড়াই লড়াই চাই,
লড়াই করে বাঁচতে চাই, আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাই নাই, লেগে ছেরে
লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, সারা
বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
এই বিষয়ে
২০২০-২১ সেশনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত তানভীর রাফি বলেন,
'২০১৮ সালের যে পরিপত্র সেটার বাস্তবায়ন আমরা চাই। সরকারি চাকরিতে এই
বৈষম্য দূর করতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ চাই। আর নয় আমরা আরও কঠোর
কর্মসূচিতে যাবো।"
পরবর্তীতে ৩:৩০ মিনিটে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক
খন্দকার মুঃ মুশফিকুর রহমানের সন্ধ্যা ছয়টার মাঝে প্রধানমন্ত্রীর কাছে
তাদের দাবিগুলো পাঠাবে এই আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে
অবরোধ তুলে নেন।
তবে অতিদ্রুত যদি দাবিগুলো না মানা হয় তাহলে
শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে কঠোর অবস্থানে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এছাড়া এবার
শুধু সড়ক পথ অবরোধ করা হলেও দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে রেলপথও অবরোধের
ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার মুঃ মুশফিকুর
রহমান বলেন, 'এটা শুধু তোমাদের দাবি না সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের
দাবি। তোমরা যে দাবি দিয়েছো সেটা আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে
পাঠিয়ে দিবো।
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের একজন রাশেদ ইবনে নূর। তিনি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। রাশেদ জানান, ৭১ এ
দেশ স্বাধীন হয়েছে বৈষম্যের জন্য না। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রেখে
নূর বলেন, কোটা সংস্কার করা উচিৎ। ৩০ ভাগ কোটা রাখা হচ্ছে মেধাবীদের
অবমূল্যায়ন করা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৩ তম
ব্যাচের ১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আনাস জানান, তিনিসহ তার সহস্রাধিক
শিক্ষার্থী কোটাপ্রথা বিরোধী আন্দোলন করছেন। তারা দাবী আদায় করে তারপর
আন্দোলন শেষ করবেন।
আন্দোলন চলাকালে মাইক্রোবাস চালক জনি জানান, গত
একঘন্টা যাবত তিনি মহাসড়কে আটকে আছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে যেতে
পারছেন না।
বাস চালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কোটবাড়ি থেকে যাত্রী
পরিপূর্ণ হওয়ার পর যখন ঢাকামূখী হয়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন তখনই আন্দোলন শুরু
করে শিক্ষার্থীরা। এখন আমরা অপেক্ষা করছি কখন আন্দোলন থামবে।
উল্লেখ্য,
২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার
প্রতিবাদে ও প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের
বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার দুপুর
সাড়ে ১২ টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছিল।