কুমিল্লা
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আলোচিত কলেজ ছাত্র জামিল হাসান অর্ণব হত্যা মামলার
প্রধান আসামি ফজলে রাব্বীর ছবি তুলে পাঠানো হয় তার স্বজনদের কাছে।
সম্প্রতি সে ছবি ফেসবুকে আসামির ছোট ভাই এ কে আল আমিনের আইডিতে পোস্ট করা
হয়। পোস্টে লেখা হয় ‘ভাই সময় আসবে ইনশাল্লাহ’। ছবিটি পরে ডিলিট করে ফেলা
হলেও তা হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দিচ্ছে সহযোগীরা।
এদিকে হত্যা মামলার
আসামির ছবি তুলে স্বজনদের কাছে সরবরাহের অভিযোগে ইসমাইল হোসেন তুহিন নামে
এক কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই কারারক্ষীর বিরুদ্ধে
বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কুমিল্লা
কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি জানান, ২
জুলাই ইসমাইল হোসেন তুহিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তার
বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও মামলা প্রক্রিয়াধীন। তার বাড়ি বান্দরবান জেলার
লামা উপজেলায় চাপাতলী, তার বাবা সামছুল হক। কুমিল্লা কারাগারে তিনি ২০২২
সালে কুমিল্লা কারাগারে বদলি হয়ে আসেন। ২০১৮ সালে তার চাকরি হয়।
গত ১৫
মার্চ দুপুর শহরতলির শাসনগাছায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় নিহত হন শাসনগাছা এলাকার জামিল হাসান অর্ণব (২৬)।
নিহত অর্ণব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজর স্নাতক (পাস) শেষ বর্ষের
শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত
অর্ণবের মা ঝর্ণা আক্তার। এতে ফজলে রাব্বীকে (৩০) প্রধান আসামি করে ২৫ জনের
নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে।
গ্রেফতারের পর থেকে ফজলে রাব্বী কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
এদিকে
কারাগারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আসামির ছবি বাইরে সরবরাহ হওয়ায় কারাগারে
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারা সূত্রে জানা গেছে, গেলো ঈদুল আজহার আগের
দিন ১৬ জুন ছবিটি তোলা হয়েছে। অভিযুক্ত কারারক্ষি জেলারের বাস ভবনের ছাদে
দায়িত্ব পালনকালে এই ছবি তুলে পাঠানো হয় বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। সে
ছবি আসামির ভাই ফেসবুকে প্রচার করে।
ঘটনার পর কুমিল্লা কেন্দ্রীয়
কারাগার পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মু.
মুশফিকুর রহমান। তিনি জানান, যে কারারক্ষী ছবি তুলে পাঠিয়েছেন তার বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কারাগারের ভেতরে আরো নিরাপত্তা বাড়াতে
বিভিন্ন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানোর ও
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার এ বিষয়টি
সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা
আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ নূর উর রহমান
বলেন, কারাগারের ভেতর থেকে এভাবে আসামির ছবি বাইরে প্রকাশিত হওয়া একটি বিরল
ঘটনা। কারা অভ্যন্তরের ছবি বাইরে প্রকাশিত হলে তা স্বাভাবিকভাবেই কারাগারে
নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে। সেই ছবি আবার ফেসবুকে পোস্ট করে
যা মন্তব্য লেখা হয়েছে তা প্রচ্ছন্ন হুমকির মতোই। আমরা অর্নব হত্যা মামলার
প্রকৃত আসামিদের সঠিক বিচার দাবি করছি। এছাড়া কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।