শেষ পর্যন্ত আদালতকেই নির্দেশনা দিতে হলো।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব
বিবরণী দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত থেকে এই আদেশ এসেছে। গত
সোমবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদ
(স্থাবর-অস্থাবর) বিবরণীর ডিজিটাল রেকর্ড ও তার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশের
যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন
করেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।
তাঁর আবেদন শুনানি করে বিজ্ঞ আদালত এই নির্দেশনা দেন।
সরকারি
কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ১১, ১২ ও ১৩ বিধিতে সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি
উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আইনের এই নির্দেশনা মানছেন না বেশির ভাগ সরকারি
চাকরিজীবী। ফলে আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? সম্প্রতি বেশ কয়েকজন সরকারি
কর্মচারীর অঢেল সম্পদ নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ উপায়ে’
সম্পদ উপার্জনের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কয়েকজনের সম্পদের অনুসন্ধান
করছে দুদক। গণমাধ্যমে প্রতিদিনই দুর্নীতির অসংখ্য খবর আসছে। সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিদের সম্পদের যে বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে, তা বিস্ময়কর।
গত সোমবার
সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। মন্ত্রিসভার
বৈঠক-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব
জানিয়েছেন, সরকারের পুরো ব্যবস্থাপনা মিলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিচ্ছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি সরকার কোনো সহানুভূতি দেখাবে না
এবং দেখানো হচ্ছেও না।
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে দেশে আইন রয়েছে, বিধি-বিধান
রয়েছে, নীতিমালা রয়েছে, কিন্তু কিছু মানুষ কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না।
অথবা বলা যায়, আইন, বিধি-বিধানের প্রয়োগ হচ্ছে না।
অবস্থাদৃষ্টে এমনটাই
মনে হয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একজন আরেকজনকে সুরক্ষা
দিচ্ছেন, সহযোগিতা করছেন এবং মিলেমিশে অন্যায় করছেন কিংবা অবৈধভাবে সম্পদ
হাতিয়ে নিচ্ছেন। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা
অনেক বাড়ানো হয়েছে। উদ্দেশ্য প্রশাসনকে স্বচ্ছ করা। কিন্তু বাস্তবে কোনো
উদ্যোগই কোনো কাজে আসছে না।
দুর্নীতি কমাতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ
থেকে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ করতে সরকারকে
পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও। আইএমএফ বলেছে, উঁচু স্তরের
দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে, সম্পদের পরিমাণ নিয়মিত
হালনাগাদের জন্য একটি মানসম্মত পন্থা অবলম্বন করে সরকারি কর্মকর্তাদের
সম্পদ ঘোষণার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্নীতিকে এমন হালকাভাবে নেওয়ার কারণেই প্রশাসনের আজ এমন দুর্গতি।
আমরা
মনে করি, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে জনপ্রশাসনের এমন সর্বগ্রাসী দুর্নীতির
লাগাম টানতে হবে। এ জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সক্ষমতা আরো বাড়াতে
হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের
পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব বিবরণী অবিলম্বে দিতে হবে। দুর্নীতির
বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।