উপাচার্য
শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের জেরে টানা ৫৩ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের রেশ কাটতে না
কাটতেই আবারো পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
আন্দোলনে অচল হয়ে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক সমিতির দাবিদার
আন্দোলনে সাময়িক শুরু হয় ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে, আবার এক সপ্তাহ পর এক
জুলাই থেকেই পেনশন স্কিম বাতিলের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা
কার্যক্রম বন্ধ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ যেন- মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তাদের
আশঙ্কা, দীর্ঘ সেশন জটের ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ বর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা এখনো
করোনা মহামারী সংকটই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সেশন জট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হওয়ার
আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এভাবে চললে - শিক্ষা ও কর্মজীবন নিয়ে আরো বেশি
অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ অর্থনীতি
বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম বক্স সাদী জানান, উপাচার্য মহোদয়ের সাথে শিক্ষক
সমিতির দ্বন্দ্বের রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারো শিক্ষক কর্মকর্তা
কর্মচারীদের পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলনে নতুন সংকটে পড়েছে কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কারণে অনেক বেশি পিছিয়ে
পড়ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত দাবি আদায়ে গত
২৪ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড.
মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত
এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণ দিবস
কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে
অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যায় শিক্ষকরা। ৩০ তারিখ
পর্যন্ত প্রথম দফার আন্দোলনে পরীক্ষা আওতামুক্ত রাখা হয়েছিলো। কিন্তু আজ (১
জুলাই) থেকে সব ধরনের পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হবে বলে
ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক ফেডারেশনের এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে
কুবি শিক্ষকরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে আবারও ব্যাহত হতে
যাচ্ছে শিক্ষাজীবন।
পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রমতে, শিক্ষক-প্রশাসন
দ্বন্দ্বে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় আটটি চূড়ান্ত পরিক্ষা স্থগিত হয়েছে। এছাড়াও
করোনা মহামারি, শিক্ষক সমিতি - উপাচার্য দ্বন্দ্ব এবং শিক্ষক রাজনীতির
কারণে এমনিতেই ধ্বংসের পথে তাদের পড়াশোনা। নতুন করে যোগ হয়েছে শিক্ষক
ফেডারেশনের আন্দোলন। এ যেন - মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
সকাল দশটায় কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী
সংগঠনগুলো। এরপরেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচির
ব্যানার নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের
কর্মকর্তাগণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করতে
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সহ
অন্যান্য শিক্ষকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি
প্রফেসর ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি
পালন করছি। আমরা আশা করি সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনার
মধ্য দিয়ে সমাধান করবেন। অন্যথায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গণ কর্মসূচি পালন করবেন।
কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী কামাল উদ্দিন জানান, আমরা এখনো উপাচার্যের
পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে আছি। একই সাথে প্রত্যয় পেনশন স্কিম বাতিলের
দাবিতেও আমরা কর্মসূচি পালন করছি। এর আগে আমরা ২৩ জুন ক্লাস পরীক্ষায় ফিরে
গিয়েছিলাম, এখন পেনশন স্কিমের দাবি পূরণ হলে আমরা পুনরায় আবারও ক্লাস
পরীক্ষায় ফিরে যাব।