একেই বলে মরার ওপর খাড়ার ঘা। আগের দুই দফার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ৩৫ দিনে তৃতীয় দফায় বন্যা কবলিত হয়েছে সিলেটবাসী। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি দ্রুত বেড়ে সিলেট নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৭ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা।
ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির প্রভাবে সিলেটে এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চার নদীর পয়েন্টে পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারিগাঙ্গ নদীর পানি দ্রুত বেড়ে পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়াও আরও ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
২৭ মে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় সিলেটে। পরে আবার ১৭ জুন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েন সিলেটবাসী। দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিলেট জেলায় প্রায় ১১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এখনও ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। অন্য উপজেলাগুলোতে পানি কমলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় পর থেকে সুরমা নদীর পানি ভারতের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
এ উপজেলার আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই আবারও তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন নতুন করে পানি বৃদ্ধিতে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ-ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৮৬ মিলিমিটার এবং শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিতে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সিলেটের সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬ জন। ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১০ হাজার ৭১৩ জন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের জন্য প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। একই কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবারও টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে।
টানা বৃষ্টিতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসমুখী লোকজন যানবাহনের স্বল্পতায় কাকভেজা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
এদিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। ইতোমধ্যে সিলেট নগরীতে থাকা ৯ টি ছড়া উপচে পানি প্রবেশ করছে অফিস ও বাসাবাড়িতে। নগরীর উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, বাগবাড়ি, ছড়ারপার, মেন্দিবাগ, বাদাম বাগিচা এলাকায় বাসাবাড়িতে ঢুকেছে বানের পানি। নগরবাসী আবারও সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ বলেন, সুরমা তীরবর্তী ১২টি ওয়ার্ডে পানি উঠে গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। আমরাও প্রস্তুত আছি এই দুর্যোগ মোকাবিলায়, আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে আগামী তিনদিন ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।