সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বিচ্ছিন্ন
কিছু পদক্ষেপ নিলেও সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সেগুলো খুব একটা
ভূমিকা রাখতে পারছে না। সমন্বিত পরিকল্পনা, তদারকি, ধারাবাহিকতা ও
ব্যবস্থাপনার অভাবে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার
উপক্রম হয়েছে। অভিযোগ আছে, বড় হাসপাতালগুলোতে অধ্যাপক বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের
সেবা রোগীরা পায় না বললেই চলে। তাঁরা বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ঘুরে
বেড়ান কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অত্যন্ত জরুরি হলেও প্রায় কোথাও এগুলো
কাক্সিক্ষত পর্যায়ে সেবা দিতে পারছে না। অভিযোগ আছে, হাসপাতালগুলোতে
চিকিৎসকসহ লোকবল অনেক কম। রোগ পরীক্ষার যন্ত্রপাতি কম, যা-ও আছে তার বেশির
ভাগই অচল থাকে। অনেক চিকিৎসক বড় শহরে থাকেন এবং মাঝেমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে যান।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবার এমন দুরবস্থার কারণে রোগীরা
বাধ্য হয় বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা বা সেবার নামে চলে
অনৈতিক বাণিজ্য। জীবন দিয়ে তার মাসুল দিতে হয় সাধারণ মানুষকে।
জীবনযাত্রার ধরনসহ নানা কারণে রোগব্যাধির প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে।
বায়ুদূষণ,
পানিদূষণসহ নানা ধরনের দূষণ, খাদ্যে ভেজাল, কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত
ব্যবহারসহ নানা কারণে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার।
বাড়ছে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ
আরো অনেক ধরনের রোগ। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, পানিবাহিত রোগ
ডায়রিয়া, কলেরাসহ আরো অনেক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ফলে মানুষের হাসপাতালমুখী
হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। এমন অনেক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে, যা
ছাড়া রোগীর বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে
জানা যায়, ২০১২ সালে ডায়ালিসিস করাতেন ২২ হাজার কিডনি রোগী। ২০২২ সালে এই
সংখ্যা বেড়ে হয় ৬৭ হাজারের বেশি। সরকারি চিকিৎসা সেবা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে
না যেতে পারায় সেই সুযোগ নিচ্ছে অতি লোভী কিছু মানুষ। সেবার মান নিশ্চিত না
করেই ক্লিনিক খুলে বসছে। মানুষ সেখানে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে। খতনা করাতে
গিয়েও শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। কম বেতনে প্রশিক্ষণহীনদের দিয়ে সেবিকার
কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভুল ওষুধ খাওয়ানোর কারণেও রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
অবেদনবিদের কাজ করানো হচ্ছে সাধারণ কর্মীদের দিয়ে। এমন অভিযোগের অন্ত নেই।
তার পরও আছে ফি আদায়ের বাড়াবাড়ি। অভিযোগ আছে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে পরীক্ষা
না করেই রিপোর্ট দেওয়ার। এসব ক্লিনিক অনুমোদনপ্রাপ্ত যেমন আছে, অনুমোদন
ছাড়াও আছে অনেক। সম্প্রতি দেশব্যাপী এ ধরনের ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান
পরিচালনা করা হয়েছে, হাজারের বেশি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া
হয়েছে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আরো জোরদার করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা
মানসম্মত না হওয়ার অর্থ হলো মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। মানুষের
বেঁচে থাকার আকুতিকে উপেক্ষা করা। আমরা আশা করি, সরকারি ও বেসরকারি উভয়
ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।