দুর্নীতি নামের বিশালকায় এক
অক্টোপাসের রাহুগ্রাস দেশের সব অর্জন কিংবা সব ভালোকে গিলে খাচ্ছে। সমাজ ও
রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসেছে। দুর্নীতি, অন্যায়,
অপরাধ থেকে সমাজকে যাঁরা রক্ষা করবেন, তাঁরাই আজ সেসবকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
বলা হয়, অর্থ বা ঘুষের বিনিময়ে অপরাধী, এমনকি খুনিরাও পার পেয়ে যাচ্ছে।
ফলে
পুলিশের আইজি, ডিআইজিসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শত শত কোটি
টাকা অর্জনের অভিযোগ ওঠে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন সাধারণ চাকরিজীবীদের
ওপর করের বোঝা চাপালেও সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ হয় না। অথচ জাতীয়
রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা
অবৈধ উপার্জনের অভিযোগ উঠছে। অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যাচ্ছে।
এসব
কর্মকর্তার অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু দেশে দুর্নীতির এমন
সর্বগ্রাসী ব্যাপকতা কিভাবে হলো? কেন এর লাগাম টানা যায়নি বা যাচ্ছে না?
কেন সাধারণ মানুষকে এসব দুর্নীতির বোঝা টানতে হচ্ছে?
গণমাধ্যমে
প্রতিদিনই দুর্নীতির অসংখ্য খবর আসছে। এসব খবর পড়ে বা শুনে সাধারণ মানুষ
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকছে। এও কি সম্ভব? পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ,
এনবিআরের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, ডিআইজি রফিকুলসহ সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিদের সম্পদের যে বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে, তা মানুষকে কেবল তাজ্জবই করছে
না, সেই সঙ্গে এসব নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের অক্ষমতা তাদের চরম হতাশও করছে।
অনিয়ম-দুর্নীতি
বন্ধে দেশে আইন রয়েছে, বিধি-বিধান রয়েছে, নীতিমালা রয়েছে, কিন্তু এরা কোনো
কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। অথবা বলা যায়, আইন, বিধি-বিধানের প্রয়োগ হচ্ছে
না। অবস্থাদৃষ্টে এমনটাই মনে হয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
একজন আরেকজনকে সুরক্ষা দিচ্ছেন, সহযোগিতা করছেন এবং মিলেমিশে অন্যায় করছেন
কিংবা অবৈধভাবে সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এককথায়, প্রশাসন ক্রমে লুটপাটের
আখড়ায় পরিণত হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে ২০১২
সালের ১৮ অক্টোবর ‘সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’
শিরোনামে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করা হয়।
সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়। উদ্দেশ্য
ছিল প্রশাসনকে স্বচ্ছ করা, কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? কোনো উদ্যোগই কোনো
কাজে আসছে না। যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নাম এখন পত্রপত্রিকায় আসছে,
জানা যায় তাঁদের কেউ কেউ শুদ্ধাচার পুরস্কারও পেয়েছেন। অতীতে জনপ্রশাসনের
অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে
কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিরস্কার ও সামান্য বেতন হ্রাস করেই তাঁদের
রেহাই দেওয়া হতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্নীতিকে এমন হালকাভাবে নেওয়ার
কারণেই প্রশাসনের আজ এমন দুর্গতি।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও জনগণের
স্বার্থে জনপ্রশাসনের এমন সর্বগ্রাসী দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। এ জন্য
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। উচ্চ আদালতের
নির্দেশনা মেনে দুদকের নিজস্ব ক্যাডার সার্ভিস তৈরি করে একে আমলাতন্ত্রের
নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।