বাজার নিয়ে ভোক্তার অস্বস্তি কিছুতেই কাটছে না। কোনোভাবেই স্থিতিশীল হচ্ছে না। এক মাস আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে জানায়, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০.২২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ প্রচ- চাপের মধ্যে রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। বাজার কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না।
কয়েক বছর ধরেই যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তার তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। মূল্যস্ফীতি দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলছে।
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলছে। সপ্তাহের বাজারদর নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মুরগি, আদা, রসুন ও ফার্মের ডিমের দাম কিছুটা কমলেও দেশি পেঁয়াজ এখন প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের অজুহাতও আছে। যেমন-গত ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম বাড়লে বলা হয়, ঈদ উপলক্ষে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছিল।
এবার নতুন করে দাম বেড়েছে। এবারের অজুহাত হচ্ছে, দাম বেড়েছে ঈদের ছুটি ও বৃষ্টির কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায়। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে কাঁচা মরিচ, বেগুন, পেঁপে, পটোল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, শসা, করলা, মিষ্টিকুমড়া-সব সবজিই বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওদিকে ডিমের দাম কমলেও মূল্যতালিকার চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি, ক্যাশ মেমোতে দাম উল্লেখ না করা এবং এসএমএসের মাধ্যমে সারা দেশে ডিম বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
দেশে বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য-স্থিতিশীলতা কম।
সরবরাহ সামান্য হ্রাস পেলে ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি পায়। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্য পরিস্থিতি এক দিনে বর্তমান পর্যায়ে আসেনি। তাঁরা মনে করেন, প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় কিছু প্রতিষ্ঠান দেশে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নির্ধারণ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে। কখনো ভোজ্য তেল, কখনো চিনি অথবা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাজার হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমদানিতে। আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে ভোক্তা।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে কিভাবে? বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের ‘ভোক্তাবান্ধব, জনবান্ধব’ নীতি গ্রহণের সময় এসেছে। ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।