এক দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় দফায় ডুবেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। উজানের ঢল এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার অবস্থাও একই রকম, সাতটি উপজেলার মধ্যে ছয়টিই পানির নিচে। বন্যা বিস্তৃত হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলায়ও।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ১২ লাখের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে বাধ্য হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোর হাজার হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক ঘরদোর বিধ্বস্ত হয়েছে।
ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামারগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রায় প্রতিবছরই বৃহত্তর সিলেটসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলে বন্যার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। কয়েক দশকের মধ্যে ২০২২ সালে বৃহত্তর সিলেট সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়েও সে বছর ব্যাপক বন্যা হয়েছিল।
সেখানে বন্যায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। সেই দুই রাজ্যের পানি নেমে আসায় এবং একই সঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলেও প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছিল। তার প্রভাব পড়েছিল আশপাশের জেলাগুলোতেও। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সে বছর বন্যায় বাংলাদেশেও ৭৩ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। উপর্যুপরি বন্যায় এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
তার পরও তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে এসব মানুষ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। জানা যায়, শুধু সিলেটেই ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে উঠে মানুষ না হয় প্রাণ বাঁচাতে পারবে, কিন্তু গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির কী হবে? অনেকের ঘরে সঞ্চিত খাবার ও মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আরো তিন দিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এমনিতেই প্রায় সব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিন দিনের ভারি বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ প্রায় প্রতিটি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। উত্তাল তিস্তায় নৌকাডুবির ঘটনায় চার শিশুসহ ছয় যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। ১৪ মাস বয়সী এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব এলাকায়ও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যার পানি যখন নামতে শুরু করে, ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তখনই স্পষ্ট হতে শুরু করে। শত শত কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যায়। বাড়িঘর, ফসলের মাঠে থাকে কেবলই ধ্বংসের ছাপ। ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সব পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এর আগে উপদ্রুত মানুষকে বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। নদীগুলোকে নাব্য করতে হবে, যাতে উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানি সহজে নেমে যেতে পারে।