আজ শনিবার পবিত্র হজ। ‘লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে মক্কার ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। এরই মধ্যে হজ পালনের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দুই টুকরো সাদা ইহরাম কাপড়ে শরীর ঢেকে সমবেত হয়েছেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ তাঁবুর শহর মিনায়। পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরের মিনা এখন যেন তাঁবুর শহর। যেদিকে চোখ যায়, তাঁবু আর তাঁবু। তাঁবুতে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ফোম, বালিশ, কম্বল বরাদ্দ। ফোমের নিচে বালু। মিনায় অবস্থান করা হজের অংশ। হজযাত্রীরা নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করছেন। মিনায় রাতযাপন জীবনের এক পরম পাওয়া। শুক্রবার হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করেন। সৌদিআরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া বলেছেন, হজ পালনে আল্লাহর অতিথিদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার ও সৌদির জনগণ অংশ নেবে।
পবিত্র স্থানগুলোতে পরিবহন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার মতো স্থানগুলো একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার জন্য থাকবে উড়ন্ত ট্যাক্সি, ট্রেন ও বাস।’
সব জায়গাতেই বিশেষ করে মিনায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো হাজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা।
আল-রাবিয়া জোর দিয়ে জানান, তার মন্ত্রণালয় আল্লাহর অতিথিদের স্বস্তি নিশ্চিত করতে ও হজে একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। এ ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরেই পরিশ্রম করছে সৌদি সরকার। এরই মধ্যে হজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার। পবিত্র নগরী মক্কা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাত ময়দানে হাজিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে সৌদি প্রশাসন।
নারী নিরাপত্তাকর্মীরা হাজিদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন বিতরণ ও হাজিদের হজের নিয়মকানুন শিখিয়ে দেবেন। হজ চলাকালীন হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক দল কাজ করবে। পাশাপাশি হজযাত্রীদের দ্রুত সেবা দিতে থাকছে এম্বুলেন্সও।
এবছরই প্রথম হজযাত্রীদের জন্য উড়ন্ত ট্যাক্সি চালু করেছে সৌদি আরব। গত ১২ জুন এর উদ্বোধন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (গতকাল) স্থানীয় সময় এশার নামাজের পর মুসল্লিরা মক্কা নগরী থেকে নয় কিলোমিটার দূরের তাঁবুর শহর মিনার উদ্দেশ্যে হেঁটে ও বাসে করে রওনা হয়েছেন। এরমধ্যে দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। আজ (শুক্রবার) হাজিরা মিনায় অবস্থান করবেন। শনিবার (গতকাল) সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরাফাত ময়দানের উদ্দেশে রওনা হবেন হাজিরা। আরাফাত ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন তাঁরা। তারপর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন এবং রাতে সেখানেই অবস্থান করবেন। পথে শয়তানকে নিক্ষেপ করার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।
হজের এই বিশাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রশাসনিক প্রতিনিধিদল সৌদি আরব পৌঁছেছেন অনেক আগেই। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার জন্য এসেছেন চিকিৎসক দল।
এবছর প্রথম বারের মতো বাংলাদেশি হাজিদের সেবায় সৌদিআরবে অধ্যয়নরত প্রবাসী শিক্ষার্থীদেরকে নিয়োগ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এবার বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৮৫ হাজার ১২৯ জন ( ব্যবস্থাপনা সদস্য সহ) হজ পালন করবেন। হজ পালন করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (গতকাল) পর্যন্ত ১৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে মক্কায় ১৩ জন ও মদিনায় ৪ জন। তাদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী রয়েছেন।