কুমিল্লার
মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাতাবাড়িয়া গ্রামে ডাকাতের হামলায় পিতা আব্দুল মালেক
(৭০) গুলিবিদ্ধ হয়, এ ঘটনা দেখে ছেলে ওমর ফারুক (৪০) এর আকস্মিক মৃত্যুর
ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে
মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির
সঙ্গীফোর্স নিয়ে ছুটে আসেন।
এলাকাবাসী ও মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে
জানা যায়, আব্দুল মালেক একজন চা-দোকানদার। বাড়ি সামনেই তার চায়ের দোকান।
প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবারও আবদুল মালেক ফজরের নামায শেষে চা-দোকান খুলে
বসেন। একটু পরেই তার স্ত্রী শহিদা বেগম আসেন চা খেতে। এরই মধ্যে দু’টি
মোটর সাইকেল যোগে ৪ জন ডাকাত, কাস্টমার সেজে দোকানে প্রবেশ করে। তারা
দোকানদার আব্দুল মালেকের কাছে সিগারেট চান, তিনি তাদেরকে সিগারেট দিতে
দিতেই, হঠাৎ ওই ডাকাতরা তার স্ত্রী শহিদা বেগমের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন,
কান থেকে কানফুল ছিনিয়ে নেয়। এসময় স্বামী আবদুল মালেক প্রতিবাদ করলে সঙ্গে
সঙ্গে ডাকাত সদস্যরা পিস্তল বের করে ওই দোকানিকে গুলি করে মুহূর্তেই পালিয়ে
যায়। আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রীর শোর-চিৎকারে তাদের ছেলে ওমর ফারুক বাড়ি
থেকে ছুটে এসে পিতার গুলিবিদ্ধ হওয়া দেখে ছেলে ওমর ফারুক সইতে না পেরে
হৃদক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মুহূর্তেই ঘটনাটি এলাকা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে আব্দুল মালেককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল
হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বিকেল সাড়ে
৩টায় স্থানীয় বাতাবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত ওমর ফারুকের জানাযার
নামায অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাযে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন
মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান চৌধুরী, এলজিআরডি
মন্ত্রীর উন্নয়ন সমন্বয়কারী কামাল হোসেন, মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ
(ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির, স্থানীয় সরশপুর ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিন
চৌধুরীসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে
দাফন করা হয়।
এঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী শহিদা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি
জানান, ও বাবা এটা কি হল! তারা (ডাকাতরা) প্রকাশ্যে দিবালোকে আমার স্বামীকে
গুলি করল! কিছুক্ষণ পর আমার ছেলেটিও মারা গেল। তার রেখে যাওয়া ৩ ছেলে ও ১
মেয়ে এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে! আর আমিও কি নিয়ে বাঁচবো!
এদিকে খবর
পেয়ে মনোহরগঞ্জ ও চাটখিল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এ বিষয়ে
মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির
বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি, সেখানে আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি,
ঘটনাটি মনোহরগঞ্জ এবং চাটখিল থানার সীমান্তবর্তী হওয়ায় উভয় থানার পুলিশ
ঘটনাটি উদঘাটন ও দোষীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি এলাকায়
ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এঘটনায় গুলিবিদ্ধ আবদুল মালেকের
ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে হতবিহ্বল তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা।