গত বছর তুরস্ক-সিরিয়া
সীমান্ত এলাকায় সংঘটিত ভূমিকম্পে মারা গেছে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ। একই
বছরে মরক্কোতে ভূমিকম্পে মারা গেছে প্রায় তিন হাজার মানুষ। গত বছর এবং এ
বছর বিশ্বব্যাপী আরো অনেক ভূমিকম্প হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প বাংলাদেশ
থেকেও অনুভূত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল পালন করা হয়েছে ভূমিকম্প
সচেতনতা দিবস। এ উপলক্ষে একটি গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে শক্তিশালী ভূমিকম্প
হলে ঢাকায় সাড়ে আট লাখের বেশি ভবন ভেঙে পড়তে পারে, যা ঢাকায় থাকা মোট ভবনের
প্রায় ৪০ শতাংশ। এতে সরাসরি মারা যেতে পারে অন্তত দুই লাখ মানুষ। আহত হতে
পারে তিন লাখের বেশি মানুষ।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার
ছাড়িয়ে যেতে পারে। গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের
(রাজউক) ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট : রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়।
ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। তাই মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ারও কোনো উপায় নেই।
ভূমিকম্পের
ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে বসবাসের ব্যবস্থা বা
ভবনগুলো আগে থেকেই ভূমিকম্প প্রতিরোধী করে গড়ে তোলা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে
ঢাকা মহানগরীর ভবনগুলোর একটি বড় অংশই ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়। সে কারণেই
সাড়ে আট লাখ ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরো অনেক কারণে এখানে
বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়। তার মধ্যে আছে, দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানোর
মতো সক্ষমতার অভাব।
অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট এত সরু যে সেখানে উদ্ধারকারী
যন্ত্রপাতি পৌঁছানো কঠিন হবে। গ্যাসের পাইপ, বিদ্যুতের তার এমনভাবে ছড়িয়ে
আছে যে ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ অগ্নিকা-েরও সূচনা হতে পারে। এসব কারণে বলা হয়ে
থাকে যে এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
শহর পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের
প্রধান কাজ হবে ভবনগুলো মজবুত ও ভূমিকম্প প্রতিরোধী করে গড়ে তোলা। বিল্ডিং
কোড বা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা যথাযথভাবে মেনে চলা। সামান্য বেশি খরচ হয়
বলে অনেকেই ভবন তৈরিতে যথাযথ নির্মাণ পদ্ধতি অনুসরণ করে না। এ ক্ষেত্রে
রাজউকের তদারকি ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন
নির্মাণের বিষয়টি সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকিমুক্তভাবে তৈরি হয়নি এমন
ভবনগুলো মজবুতীকরণ বা ভূমিকম্প প্রতিরোধী করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব
ভবনের মজবুতীকরণ সম্ভব নয়, সেগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে এবং ভেঙে নতুন
করে গড়তে হবে। এসব ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই।