দেশে মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় চাপ
খাদ্যে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য বলছে, খাদ্য
মূল্যস্ফীতি মে মাসে ১০.৭৬ শতাংশে উঠেছে। এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
ছিল ১০.২২ শতাংশ। অবশ্য গত মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান
(বিআইডিএস) এক জরিপের ফল তুলে ধরে জানিয়েছিল, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫
শতাংশ।
বাড়তি এই মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œ আয়ের মানুষ অসুবিধায় রয়েছে।
মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাছের দাম। গত এক
বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এরপর রয়েছে পোলট্রি মুরগির দাম।
দেশের
পোলট্রি খাদ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। গত দুই বছরে আমদানি করা এসব
খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে
ভূমিকা রেখেছে। বিআইডিএস বলছে, সরকারের হিসাবের চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
বেশি।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী দেশের বাজারে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সর্বশেষ গত মে মাসে আবার বেড়ে ৯.৮৯ শতাংশে ওঠে।
এর
প্রভাবে সবচেয়ে চাপে পড়েছে নি¤œ আয়ের মানুষ। সীমিত আয়ের মানুষের আয়ে
পোষাচ্ছে না। অনেককে সঞ্চয় ভেঙে চলতে হচ্ছে। টাকার বিনিময় হার বাজারমুখী
করা, সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মতো নীতিনির্ধারণী
বিষয়গুলোতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বড় পরিবর্তন ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে, যা
নতুন করে চাপ তৈরি করেছে উত্তরণের পথে থাকা অর্থনীতিতে। বিশেষজ্ঞরা মনে
করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সুদহার বাড়ানো বা এ রকম পৃথক পদক্ষেপ
নিলে হবে না।
এর সঙ্গে শুল্ক কমানোসহ সমন্বিতভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।
মূল্যস্ফীতি
কমাতে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ালেও আইএমএফের শর্ত মানতে টাকার মান কমানো
হচ্ছে। জ্বালানি-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে
মূল্যস্ফীতিতে। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি। গত মার্চ মাসে এই হার
ছিল ৯.৮৭ শতাংশ।
আমরা কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করছি, বাজার সাধারণ মানুষের
নাগালের মধ্যে থাকছে না। নিত্যপণ্যের দাম যখন-তখন বেড়ে যাচ্ছে। জনসাধারণের
জীবনমানে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূল্যস্ফীতির
প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই বেশি পড়ে। কারণ তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায়
খাদ্যপণ্য কিনতে। দেশের অর্থনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন
থেকেই সতর্ক করে আসছেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় বড় প্রতিবন্ধক
মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, তখনই
নীতিনির্ধারকমহল থেকে বলা হয়ে থাকে, আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে
মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে শুধু সুদহার বাড়ানো বা এ রকম পৃথক পদক্ষেপ নিলে হবে না। এর
সঙ্গে শুল্ক কমানোসহ সমন্বিতভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, মধ্য মেয়াদে মূল্যস্ফীতি কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাজারে পর্যাপ্ত
পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।