হোমনা
প্রতিনিধি: ৫ জুন চতুর্থ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লার হোমনায় ৯
জন প্রার্থীকে ঘিরে সর্বত্র চলছে নানা হিসাব নিকাশ, বিচার বিশ্লেষন ও
সমীকরণ। নির্বাচনের বাকি মাত্র দুইদিন। ইতো মধ্যে প্রার্থীরা তাদের কর্মী
সমর্থকদের নিয়ে হাট-ঘাট, পাড়া মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা
করেছেন। দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এ নিয়ে গ্রাম্য টং দোকান গুলোতে গভীর
রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। এতে কর্মী সমর্থকদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে
যুক্তিতর্তে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা যার যার কর্মী সমর্থকের নিয়ে ভোটারদের
মনজয় করতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্ঠা করছেন।
এদিকে সাধারণ ভোটাররা
প্রার্থীদের যোগ্যতা,আচার আচরন ও বিগত দিনের কার্যকলাপ নিয়ে হিসাব-নিকাশ ও
চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে।তাদের দাবী একটাই তারা যোগ্য প্রার্থীই ভোট দিবেন।
উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন তারা হলো- স্থানীয় সংসদ
সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল মজিদের স্ত্রী, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
রেহানা বেগম- আনারস, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী এ.কে.এম
সিদ্দিকুর রহমান আবুল-মোটর সাইকেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারী
মো: শহিদ উল্লাহ-ঘোড়া।
ভাইস চেয়ারম্যান( পুরুষ) প্রার্থীরা হলো জেলা
পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য মো: মকবুল হোসেন পাঠান (তালা), উপজেলা যুবলীগের
সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মনিরুজ্জামান টিপু-টিয়া পাখি, মো. নাসির উদ্দিন পাঠান (
উড়োজাহাজ)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- এ্যাডভোকেট খন্দকার হালিমা বেগম-(হাঁস) নাজমা হক(ফুটবল) শিউলী আক্তার আলো-(কলস)।
এদিকে
কুমিল্লা-২ (হোমনা- মেঘনা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল মজিদের স্ত্রী
রেহানা বেগম গত ৫ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তাঁর
বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম দুর্নীতি বা কোন বদনাম ওঠেনি। তাঁর স্বামী বর্তমান
নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ায় তিনি নির্বাচিত হলে বরাদ্ধকৃত অর্থ সঠিক ভাবে
বাস্তবায়ন করতে পারবেন। তাছাড়া তিনি এলাকায় একজন সহজ সরল ক্লিন ইমেজের
নারী হিসেবে পরিচিত। ভোটাররা আবারও তাকে নিয়েই হিসাব-নিকাশ কষছেন। ভোটারা
মনে করছেন তিনি নির্বাচিত হলে গত ৫ বছরের মতো সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস
করতে পারবে। এমন উন্নয়নোর ব্যাপারে জবাবদিহি করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে
মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ
সম্পাদক এ.কে.এম সিদ্দিকুর রহমান আবুল সাংগঠনিক ভাবে বেশ শক্তিশালী। তিনি
ছাত্ররাজনীতি থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দলীয় গ্রুপিং এর
কারনে তিনি মজিদ গ্রুপের অনুসারি ছিলেন। কিন্ত এ নির্বাচনে আবদুল মজিদের
স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় এ.কে.এম সিদ্দিকুর রহমান আবুল মজিদ গ্রুপ ছেড়ে
সেলিমা আহমাদ মেরী গ্রুপের সমর্থন নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তবে সেলিমা আহমাদ মেরী
গ্রুপের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বেশীর ভাগ নেতা কর্মী তার
পক্ষে রয়েছেন। সুতরাং সাংগঠনিক ভাবে বিবেচনা করলে জয়ের ব্যাপারে তিনিও
আশাবাদী।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী মাঠে থাকলেও লড়াই
হবে রেহানা বেগম ও এ.কে.এম সিদ্দিকুর রহমান আবুলের মধ্যে।কেন না
ইতোমধ্যে আনারস প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে
দাড়িয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মো. শহীদ উল্লাহ। আঞ্চলিকতার বিবেচনায়
রেহানা বেগমের পাল্লাই ভারী হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) প্রার্থী তিন জন হলেও উড়োজাহাজ প্রতীকের
প্রার্থীকে তালা প্রতীকের প্রার্থীর ডামি প্রার্থী হিসাবে বিবেচনা করা
হয়।সেই হিসাবে তালা প্রতীকের প্রার্থী মো. মকবুল হোসেন পাঠান ও টিয়া
পাখির প্রার্থী মনিরুজ্জামান টিপুর মধ্যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে বলে
ভোটারদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে।
সাধারণ ভোটাররা মনে করেন মকবুল পাঠান
ব্যবসায়ীও নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ করছেন। তিনি নির্বাচিত হলে দুর্নীতি
থেকে বিরত থাকবেন। বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজে আর্থিক সহযোগীতা ও করতে
পারবেন। এলাকার বিচার, থানার তদবির কম করবেন এ বিবেচনায় ভোটারদের একটি বড়
অংশ ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে তাকে চায়।
অপর দিকে মনিরুজ্জামান টিপুর
রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। সে ইতোমধ্যে দুইবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা
করায় কেন্দ্রভিত্তিক রয়েছে তার বহু কর্মী। সাংগঠনিক ভাবে বিবেচনা করে ভোট
দিতে চায় একটি অংশ। সেই হিসাবে হাড্ডাহাড্ডিতা লড়াই হবে বলে মনে করছেন
সাধারণ ভোটার।অবশেষে কে হাসে বিজয়ের হাসি তা দেখতে ৫ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা
করতে হবে সবাইকে।
এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তিনজন
এ্যাডভোকেট খন্দকার হালিমা বেগম (হাঁস), শিউলী আক্তার আলো (কলস) ও নাজমা
হক ( ফুটবল) প্রত্যেকই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। হাঁস
প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট খন্দকার হালিমা বেগম গত নির্বাচনে অংশগ্রহন
করে পরিচিতির দিক দিয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে। এবং তার এলাকা বড় হওয়ায়
আঞ্চলিকতার কারনে তার অবস্থা ভাল। শিউলী আক্তার আলো সাংগঠনিক ভাবে বেশ
পরিচিত।দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্যে এর পক্ষে নির্বাচন করার
কারনে নেতা কর্মীরা তার পক্ষে কাজ করছেন। তাঁর মাঠও ভাল। অপর দিকে নাজমা
হকের রয়েেেছ বিএনপি দলীয় নিরব ভোট। বিএনপি মনা ভোটার তাকে ভোট দিলে জয়ের
ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী।
স্থানীয় রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন আসন্ন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাদ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ফলাফল হবে এক রকম। আর
কোন প্রার্থী পেশী শক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পাইলে ফলাফলের চিত্র ভিন্ন
হবে। ইতোমধ্যে প্রত্যেক প্রার্থীই প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা
জানান, অবাদ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে প্রশাসন কাজ করছে। ভোটের দিন
প্রতি তিন কেন্দ্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। থাকবে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী।