নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের কলকাতায় খুন হয়েছেন, ব্যাপারটি অনেকটা নিশ্চিত হলেও তার সংসদীয় আসনটি এখনো শূন্য ঘোষণা করা হয়নি। কেন ওই আসনটি এখনো শূন্য ঘোষণা করা হচ্ছে না- এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ‘কোনো সংসদ সদস্যের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা হবে তা সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আনার সাহেব মারা গেছেন কি না অফিশিয়ালি আমরা জানি না। এক্ষেত্রে সংসদ যেভাবে বলবে সেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ঝিনাইদহের এমপি আনারকে সম্প্রতি কলকাতায় খুন করার খবর প্রকাশিত হয়। তবে লাশ বা দেহাংশ না পাওয়ায় তার আসনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মৃত্যুজনিত কারণ উল্লেখ থাকলেও সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখ করা হয়নি কেন?
এমপি আনারের আসন শূন্য ঘোষণা নিয়ে কেন জটিলতা সে বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে সংবিধানের ৬৭ ধারার তথ্য তুলে ধরেন তিনি। ইসি আলমগীর বলেন, ‘কোনো মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলে, স্বাধীনতাবিরোধী হলে বা ট্রাইব্যুনালে সাজা পেলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। আদালত যদি অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করে তা হলেও সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এ ছাড়া যদি কোনো সদস্য পদত্যাগ করেন এবং সংসদের অনুমতি না নিয়ে একাধিক্রমে সংসদে ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকেন, তবে তার সদস্যপদ থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর কারণে সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে এটি সংবিধানে আজ পর্যন্ত দেখিনি। তবে এটিই সাধারণত ধরে নেওয়া হয়। কারণ একজন সংসদ সদস্য মারা গেলে উনার পক্ষে তো আর সংসদে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হবে না। আর সে কারণেই বিষয়টি সংবিধানে এভাবে বলা আছে। এটি এক ধরনের অসঙ্গতি কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৃত্যুজনিত কারণ উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। যেহেতু ৯০ দিন টানা না থাকলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না, এটি ধরে নিয়েই আসনটি শূন্য হবে। তবে সংবিধানে মৃত্যুর কারণে আসন শূন্য হওয়ার কথা স্পষ্ট উল্লেখ নেই। আনার সাহেব মারা গেছেন কি না, অফিসিয়ালি আমরা জানি না।’
এমপি আনারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ইসির করণীয় কী, সংসদীয় আসন যেসব কারণে শূন্য হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে অনেক কারণে আসন শূন্য হয়। আনার সাহেবের মৃত্যু স্বাভাবিক না অপমৃত্যু- সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব সংসদের। এ বিষয়ে আমরা অফিশিয়ালি কিছু জানি না। এক্ষেত্রে সংসদ সচিবালয় যেভাবে বলবে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবকিছু স্পষ্ট করে লেখা না থাকলে যে কাজ করা যাবে না তা তো নয়। তবে এ বিষয়ে গেজেট না পাওয়া পর্যন্ত ইসি নির্বাচন করতে পারবে না।’
এ সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক ধাপে করা প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য ব্যক্তিগত অভিমত। আইনে যা আছে কমিশনকে সেভাবেই নির্বাচন করতে হবে। কমিশন কোনো পরামর্শ, সুপারিশ করতে পারে না। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধাপে ধাপে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নয়। পদ্ধতি যেটাই হোক না কেন- তা ঠিক করবে রাজনৈতিক দল, সংসদ, ভোটার তারাই ঠিক করবেন। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক না কেন, সংবিধানে যে অবস্থা থাকবে, সেই অবস্থার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনটা সুষ্ঠু করার।’
এর আগে গতকাল রবিবার (২ জুন) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসি ধাপে ধাপে নির্বাচন হলে তা আরও গ্রহণযোগ্য ও ভালো হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন।
সূত্র: খবরের কাগজ অনলাইন।