জাতীয়
খেলা কাবাডি। সেই কাবাডি জাতীয় দলের অধিনায়ক আরদুজ্জামান মুন্সি। আজ
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবসর নিয়েছেন।
কাবাডির অন্যতম তারকা খেলোয়াড়কে ফেডারেশন বিশেষ ভাবে বিদায় দিয়েছে।
ফুটবল,
ক্রিকেট সহ অনেক খেলায় তারকা খেলোয়াড়েরা মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেন না।
এক্ষেত্রে আরদুজ্জামান একটু ব্যতিক্রম হলেন। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী
ইনডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার দর্শক। এদের সামনে দলকে
চ্যাম্পিয়ন করে ফাইনাল সেরা হয়ে অধিনায়ক বিদায় নিয়েছেন। এমন ঘটনা
ক্রীড়াঙ্গনে খুব বেশি ঘটে না।
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা
আরদুজ্জামান কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, ‘গতকাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।
লাল-সবুজের জার্সি আর খেলবো না, এটা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আজ হোক কাল হোক,
তারপরও তো বিদায় নিতে হবেই। শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবে বিদায় নিতে পেরেছি,
এজন্য আমি সুখি।’ খেলা শুরুর আগে অবসরের ঘোষণা দিয়ে পাগড়ি পড়ে ম্যাট
প্রদক্ষিণ এবং খেলা শেষে গলায় মালা পড়ে, হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে সতীর্থদের
কাঁধে চড়ে ম্যাট প্রদক্ষিণ করেন আরদুজ্জামান মুন্সী।
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি
উচ্চতার অধিকারী আরদুজ্জামান বলেন, ‘আসলে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
এভাবে এত আয়োজন করে, ঘটা করে আমাকে বিদায় দেয়া হবে-এটা কল্পনাও করিনি।
আমাকে এত সুন্দর করে বিদায় দেয়াতে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনকে আন্তরিক
ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ তার অধিনায়কত্বে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
এবার শিরোপা জয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই আমাদের টিম কম্বিনেশন
অনেক ভাল ছিল। এই আসরে অনেক ভাল ভাল দল এসেছে। কোন টিমই দুর্বল না। আমাদের
খেলার ধারবাহিকতা এতই সুন্দর ছিল যে শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত আমাদের কখনই
চাপে পড়তে হয়নি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পারফরমেন্স দিয়েই দলকে জেতাতে
পেরেছি।’
বঙ্গবন্ধু কাপ কাবাডিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলেও গত
এশিয়ান গেমসে ব্যর্থ হয়েছে। এশিয়ান পর্যায়ে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে
আরদুজ্জামান বলেন, ‘সর্বশেষ এশিয়ান গেমসে দলে ছিলাম না। তবুও আশা করেছিলাম
অন্তত একটা পদক আসবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বঙ্গবন্ধু কাপে যে চাইনিজ তাইপেকে
আমরা অনায়াসেই হারাই, সেই তাইপের কাছেই আমরা হেরে বসি। তবে আমি দৃঢ়
আশাবাদী নেক্সট এসএ গেমসে ও এশিয়ান গেমসে আমাদের পদক থাকবে। বঙ্গবন্ধু কাপে
পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা আসেনি। তাদের কাছে সাফ গেমসে আমরা
হারলেও আমি বিশ্বাস পরের সাফ গেমসে আমরা তাদের হারিয়ে রৌপ্যপদক আনতে পারব।’
২০০৯
সালে কাবাডি দলে আরদুজ্জামানের অভিষেক। দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ইন্দোর
এশিয়ান গেমস, এসএ গেমস, এশিয়ান গেমস, ইন্দো-বাংলাদেশ গেমস, বিচ গেমস,
এশিয়ান গেমস , প্রো-কাবাডি, ২০১৬ এসএ গেমস, ২০১৬ বিশ্বকাপ, প্রো-কাবাডি,
চারটি বঙ্গবন্ধু কাপ কাবাডি টুর্নামেন্ট খেলেছেন দেশের হয়ে।
আরদুজ্জামান
ঘরোয়া কাবাডিতে এখন খেলছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে। এই সংস্থায় এখন পেটি
অফিসার হিসেবে চাকরিরত। এর আগে খেলেছেন বাংলাদেশ পুলিশে। অবসর নিয়ে তিনি
বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে কাবাডি থেকে বিদায় নিলেও কাবাডি থেকে বিদায় নিচ্ছি
না। বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে আমাকে আর দেখা যাবে না মাঠে, কিন্তু
কাবাডির সঙ্গেই ইনশাল্লাহ থাকার চেষ্টা করব।’