![পশু মোটাতাজাকরণ ঔষধে সয়লাব ব্রাহ্মণপাড়া]( https://www.comillarkagoj.com:443/2024/06/03/CK_1717355772.jpg)
ঈদুল
আযহা সামনে রেখে ব্রাহ্মণপাড়ায় গবাদি পশুর খামারিরা এখন ব্যস্ত সময়
কাটাচ্ছেন। শৌখিন খামারিরা প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ উন্নত জাতের ফিড বা
পশুখাদ্য ও বাড়তি যতেœর মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছে দীর্ঘদিন ধরেই।
ব্রাহ্মণপাড়াসহ কুমিল্লার বিত্তশালী ব্যক্তিরা কোরবানী উপলক্ষে লাখ লাখ
টাকা খরচ করে এসব মোটাতাজা গরু কিনে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে
বছরগুলোতে একশ্রেণীর খামারি ও গরু ব্যবসায়ী গরু মোটাতাজাকরণে অত্যন্ত
ক্ষতিকর, পশু ও মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করছেন। জনস্বাস্থ্য ও
প্রানি স্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে তারা যেনতেন প্রকারে অল্প কিছুদিনের
মধ্যে রোগা পাতলা গরুকে মোটাতাজা করতে মারাত্মক সব ওষুধ ও রাসায়নিক প্রয়োগ
করছেন। এসব গরুকে তারা অরাডেক্সন, ডেক্সামিথাসন, ডেকাসন, স্টেরন,
প্রেডনিসলনসহ নানা ব্র্যান্ডের সস্তা দামের স্টেরয়েড জাতীয় টেবলেট, পাউডার ও
সলিউশন প্রানি খাবারের সাথে ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া ঈদের কাছাকাছি সময়ে এসে
তারা স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ইনজেকশনও পশুর শরীরে পুশ করছেন। এসব ওষুধ ও
হরমোনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পশু দ্রুত অবিশ্বাস্য হারে মোটাতাজা হয়ে
উঠলেও এর ফলে পশুর মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়, অল্পদিনের মধ্যেই
কিডনী ও লিভার বিকল হয়ে মৃত্যু হতে পারে। আর এসব পশুর গোস্ত খাওয়াও মানুষের
জন্য নিরাপদ বা স্বাস্থ্যকর নয়। স্টেরয়েড ও হরমোন প্রয়োগে মোটাতাজা করা
গরুর গোশত খেলে মানবদেহেও অনুরূপ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের
ধারণা। একশ্রেণীর পশু চিকিৎসক এবং নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির এসব অবৈধ
ওষুধের রমরমা ব্যবসায় চলছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারীর অভাব এবং
মারাত্মক ক্ষতিকর ওষুধের বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না থাকায় গরু
মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্টেরয়েড ও
হরমোনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না, বরং বেড়ে চলেছে। প্রতিবছরই কোরবানীর ঈদের
আগে এ বিষয়ে লেখালেখি হলেও সরকারের ওষুধ প্রশাসন, প্রানি সম্পদ ও
জনস্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। অথচ পশু
মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত ওষুধের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। দেশের লাখ লাখ মানুষের
কিডনি, লিভারসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার পেছনে গরু, পোল্ট্রি ও মৎস্য
খামারে ক্ষতিকর খাদ্য ও ওষুধ ব্যবহারের নিশ্চিত দায় রয়েছে। খামারের পশুদের
উপর স্টেরয়েড ও হরমোনের যথেচ্ছ ব্যবহারের প্রভাব আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতি ও
জীব-বৈচিত্র্যের উপরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে শুরু করেছে। ঈদুল আযহা গরুর গোশত
খাওয়ার উৎসব নয়। এটি ইসলাম ধর্মের ইতিহাস ও ঐতিহ্যেলালিত অন্যতম
তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। ধর্মে সুস্থ ও সুন্দর
পশু কোরবানী করার নির্দেশ রয়েছে। প্রানিস্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্যের কথা
বিবেচনা না করে অত্যন্ত ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করা
একদিকে দেশীয় আইন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্মত নয়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সচেতন
মহল বলেন, ভারতীয় ও অবৈধ ওষুধের উৎস বন্ধ করতে হবে। গরু মোটাতাজাকরণ
খামারগুলো এবং ওষুধ ও প্রানিখাদ্যের দোকানগুলোর উপর স্বাস্থ্য বিভাগ,
প্রানিসম্পদ অধিদফতর এবং ওষুধ প্রশাসনের নজরদারী বাড়াতে হবে। স্টেরয়েড ও
হরমোন প্রয়োগে মোটাতাজা করা গরু বিক্রি বন্ধ করতে প্রয়োজনে পশুর হাটগুলোতে
গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব গরু কেনা থেকে জনসাধারণকে
বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় প্রচারণা ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।
মায়ের দোয়া পোল্ট্রি কমপ্লেক্সের মালিক
ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা নামি-দামি কোম্পানির ঔষধ পশু চিকিৎসকদের
প্রেসক্রিপশনে বিক্রি করি। অনেক দোকানে নামে বেনামে ভেজাল ঔষধসহ পশু
মোটাতাজা করা ঔষধ বিক্রি করছে।
এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাণি
সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো: ইজমাল হাসান দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন,
গতকাল আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভারতীয় ও নি¤œমানের
ওষুধ বন্ধ করতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছি। ঈদের আগ পর্যন্ত এ অভিযান
অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়াও খামারিদেন স্টেরয়েড নি¤œমানের ওষুধ ব্যবহার করতে
সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। এবং স্টেরয়েড জাতীয় প্রাণির মাংস খেলে গর্ভবতী
মায়েদের এবর্শন পর্যন্ত হতে পারে তাই সকলের সচেতন হতে হবে।
এ ব্যাপারে
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স,ম,আজাহারুল ইসলাম দৈনিক
কুমিল্লার কাগজকে বলেন, যারা ভারতীয় ও নি¤œমানের ওষুধ বিক্রি করে তাদের
বিরুদ্ধে আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছি, ঈদের আগ পর্যন্ত উপজেলার
বিভিন্ন বাজারে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।