
‘দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে হাড়-মাংস
আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে তাতে হলুদ
মাখান অভিযুক্তরা, যাতে কেউ জিজ্ঞেস করলে
বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নেওয়া হচ্ছে’
ঝিনাইদহ-৪
আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকা-ের ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার
নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। ভারতের বিভিন্ন
গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তারের পর জিহাদ জেরার
মুখে এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
আনন্দবাজার ও এনডিটিভি
জানিয়েছে, সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ বলেছেন, প্রথমে আনারকে শ্বাসরোধে খুন
করা হয়। তারপর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়।
চামড়া ছাড়িয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তরা, যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা
যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
পশ্চিমবঙ্গের
সিআইডির সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর
জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আনারকে খুনের পর সেখানেই
দেহাংশ ফেলা হয়েছে বলে জেরায় উঠে এসেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে
কোনো দেহাংশ মেলেনি। তাই জিহাদের ১৪ দিনের রিমান্ড চাওয়া হতে পারে।
আনন্দবাজার
আরও জানিয়েছে, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা।
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে
অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
জিহাদ জানিয়েছেন,
অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ সব কাজ করেছিলেন। জিহাদ ছাড়াও
আরও চার জন বাংলাদেশি নাগরিক এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন।
ঝিনাইদহ-৪
আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত
১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু
স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে
নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয়
দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক
বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকা-ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ
ঘটনায় বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হলেন-
আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে বৃহস্পতিবার এই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বৃহস্পতিবার
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, আনার হত্যার হোতা
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকা-টি
বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল।
অতিরিক্ত
কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, “ডিবি হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা
ডিবির কাছে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিল, সেই একই বর্ণনা ভারতের তদন্ত
কর্মকর্তাদের কাছেও দিয়েছে।
“আর ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া এক সন্দেহভাজন
ব্যক্তিকে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য
আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ বা দেহের অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে
দেশের পুলিশ।”
ভারতের কলকাতায় সংঘটিত এ হত্যাকা-ের মাস খানেক আগেই ঢাকার
গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় বসে খুনের ছক আঁটা হয় বলে জানান গোয়েন্দা
কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
তিনি বলছেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে লাশ উদ্ধার করা কঠিন।