ঝিনাইদহ-৪
আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন
আসামিকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা
পুলিশ। গ্রেপ্তার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল
আলী ওরফে সাজিকে শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম
আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। সেই সঙ্গে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে দশ দিনের
রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয় মহানগর হাকিম
দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে। শুনানি শেষে তিনি তিন আসামির প্রত্যেককে আট
দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ
নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন জানান।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের
সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি
চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ
ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ
হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই
দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন
হয়েছেন এমপি আনার।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায়
এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে দেশে তিনজনকে পুলিশ
গ্রেপ্তার করেছে। এমপি আনারের মরদেহ পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারদের
জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে কলকাতার ওই বাড়িতে আনারকে
পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।
আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বুধবার
সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার
বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়। তবে আসামি হিসেবে সেখানে
কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
গ্রেপ্তার তিনজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েই রিমান্ডে নিয়েছ গোয়েন্দা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার
দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আনার
হত্যার হোতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর
হত্যাকা-টি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল।
অতিরিক্ত
পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ভারতের কলকাতায় সংঘটিত এ হত্যাকা-ের
মাস খানেক আগেই ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় বসে খুনের ছক আঁটা হয়। সংসদ
সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া
হয়েছে, যার কারণে লাশ উদ্ধার করা কঠিন।
তবে কী কারণে আনার হত্যার শিকার হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে
ভারত থেকে আসা চার তদন্তকারী বৃহস্পতিবার রাতে তারা মিন্টো রোডের গোয়েন্দা
কার্যালয়ে গ্রেপ্তার তিন সন্দেহভাজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
পরে অতিরিক্ত
কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, “ডিবি হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা
ডিবির কাছে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিল, সেই একই বর্ণনা ভারতের তদন্ত
কর্মকর্তাদের কাছেও দিয়েছে।
“আর ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া এক সন্দেহভাজন
ব্যক্তিকে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য
আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ বা দেহের অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে
দেশের পুলিশ।”