বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি।
একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।
পাশাপাশি ছিল কুয়েত। কাছের দেশ মালয়েশিয়াও
একসময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ইউরোপের নানা দেশেও
জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ হারাতে বসেছি আমরা। ২০২১ সালে মালদ্বীপের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন,
বাংলাদেশ থেকে আরো শ্রমিক নেবে মালদ্বীপ।
চুক্তির ভিত্তিতে কাঠামো তৈরি
করে এ দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেবে তারা। সে সময় বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে
একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয় মালদ্বীপের। কিন্তু সেই মালদ্বীপই এখন
তাদের শ্রমবাজারে বাংলাদেশ থেকে আর কোনো অদক্ষ কর্মী নেওয়া হবে না বলে
জানিয়ে দিয়েছে। গত বুধবার মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক
বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,
মালদ্বীপের বর্তমান আইন অনুযায়ী এক দেশ থেকে এখানে এক লাখ কর্মী কাজ করতে
পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মালদ্বীপ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশিদের জন্য নতুন
ওয়ার্ক ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হাইকমিশন কর্তৃক বাংলাদেশের কোটা
বাড়ানো এবং আবার ভিসা চালু করার বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বিজ্ঞপ্তিতে
আরো জানানো হয় যে ফ্রি ভিসা বলতে এখানে কিছু নেই। কর্মীরা যেই কম্পানির
ভিসা পেয়েছেন, সেখানেই কাজ করতে হবে।
অবৈধভাবে নিয়োগের কারণে বন্ধ হলো মালদ্বীপ শ্রমবাজার।
বাংলাদেশের
অভিবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এই যে অনেক পুরনো বাজার বন্ধ হয়ে
গেছে। নতুন বাজার খুলছে না। আবার পুরনো অনেক বাজার নানা কারণে সংকুচিতও হয়ে
গেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায়
বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এর একটি প্রধান কারণ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে
আমাদের পিছিয়ে থাকা। এ ক্ষেত্রে আরো উদ্যোগী হতে হবে। নতুন শ্রমবাজার খুঁজে
বের করতে হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। দক্ষ জনশক্তি
রপ্তানির মাধ্যমে আরো বেশি রেমিট্যান্স আয় সম্ভব হতে পারে। কারণ দক্ষ
জনশক্তি স্বাভাবিকভাবেই বেশি আয় করবে। এর জন্য যথার্থ কর্মপরিকল্পনা দরকার।
বাংলাদেশের
অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের
অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি
রপ্তানি কমেছে। তবে ইউরোপের নানা দেশে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ থাকা
সত্ত্বেও নানা কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে না। এসব
বাজার হারাতে বসেছি আমরা। এখন নতুন করে আমাদের শ্রমবাজার খুঁজতে হবে। পুরনো
বাজারগুলোতে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর
চেষ্টা করতে হবে।