নতুন রুপে ফিরে আসছে পুড়ে ছাই হওয়া বঙ্গবাজার
|
![]() আমিনুল বলেন, "আমার মতো দোকান মালিক যারা বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য একটি আধুনিক শপিং মলে জায়গা পাওয়া স্বপ্নের মতো। গত বছরের অগ্নিকাণ্ডের পর আমি ভেবেছিলাম আমি কিছুই পাব না। নতুন মার্কেটে জায়গা নিশ্চিত করতে একজন দোকান মালিককে চলতি মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিন লাখ টাকা জমা দিতে হবে । এ যাত্রায় আমিনুল একা নন। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে দোকান হারানো ২ হাজার ৯শ ৬১জন দোকান মালিক নতুন মার্কেটে জায়গা বরাদ্দ পাবেন “ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করবেন। জীবিকা পুনর্নির্মাণ করতে আগ্রহী দোকান মালিকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে। বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান ১০৬.২৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিত একটি ১০ তলা ভবন হবে যেটিতে চারটি ব্লক, পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি, ছয়টি জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি এবং ৮০ থেকে ১১০ বর্গফুটের ৩হাজার ২শ ১৩টি দোকান থাকবে। প্রতি তলায় ২৫০ বর্গফুটের ফুড কোর্ট এবং আলাদা টয়লেট ব্লকও থাকবে। মার্কেটটিতে আটটি লিফট থাকবে, চারটি যাত্রীদের জন্য এবং চারটি পণ্যের জন্য। মার্কেটের চারপাশের রাস্তাগুলো সহজে প্রবেশের সুবিধার জন্য ৭ থেকে ১০ ফুট চওড়া হবে। ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সহ ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেলের জন্য ভূগর্ভস্থ পার্কিং থাকবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগর এবং আদর্শ হকার্স মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের জন্য ২,৯৬১টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে অতিরিক্ত ২৪৪টি দোকান থাকবে যা নিয়ম অনুযায়ী একটি আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ঢাকা দক্ষিণের চিফ এস্টেট অফিসার কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, "দোকান বরাদ্দের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। বাকি দোকানগুলো একটি খোলামেলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। দোকানের থেকে বেশি আবেদন আসলে লটারি করা হবে।" ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতে, প্রতি বর্গফুটে ৫ হাজার ৫শ টাকা খরচে আনুমানিক ৩৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ের মার্কেটটির নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা এর নির্মাণ কাজ পরিচালিত হবে। প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা দক্ষিণের সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তাওহিদ সিরাজ বলেন, "একটি মার্কেট ভবন তৈরি করতে ৩-৪ বছর সময় লাগে। তবে আমরা ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছি। মালিকরা পর্যায়ক্রমে টাকা পরিশোধ করবেন এবং মার্কেটের জন্য সেই অনুযায়ী নির্মাণকাজ চলবে।" ঢাকা দক্ষিণের প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুড়ে যাওয়া মার্কেটটিতে আগে দোকানের আকার ছিল ১৭ থেকে ২২ বর্গফুট। কিন্তু নতুন মার্কেটে দোকানের আকার ৮০ থেকে ১২০ বর্গফুটের মধ্যে থাকবে। বড় দোকানের আকারের কারণে মালিকদের অবশ্যই প্রাথমিকভাবে এ মাসে ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে নির্মাণকাজ চলাকালীন আরো কিছু টাকা জমা দিতে হবে। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, "আমরা খুবই আনন্দিত যে বঙ্গবাজার মার্কেট ভবনের কাজ শুরু হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্বোধন করবেন।" তিনি আরো বলেন, "নির্মাণ শুরু করতে যে তহবিল দরকার তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ইতোমধ্যেই রয়েছে। বঙ্গবাজারে অস্থায়ী দোকান বরাদ্দের সময় দোকান মালিকরা আগে এক লাখ টাকা করে জমা দিয়েছিলেন। আর এই আমানত এখন ৪২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।" তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেক দোকান মালিক সোমবার তিন লাখ টাকা জমা দেওয়ার চিঠি পেয়েছেন।
|