বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ-যুবকের
সংখ্যা অনেক। কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রচুর বাংলাদেশি বিদেশবিভুঁইয়ে
যায়। কেউ বৈধ উপায়ে যায়, কেউ অবৈধ উপায়ে। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে
প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে প্রতারকচক্র।
আবার
বিদেশে যাওয়ার নেশায় ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষমতাটুকুও অনেকে হারিয়ে ফেলে।
সাধারণ পর্যায়ের কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসন কত যে কঠিন, পরিস্থিতি যে কত
নির্মম, সে ধারণা অনেকেরই আছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে,
ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যও অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান
নিয়েছে। যারা ওই দেশে বৈধভাবে থাকার আবেদন করে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে,
তাদের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফিরতে হবে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য
গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে প্রথমবারের মতো স্বরাষ্ট্রবিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং
গ্রুপের বৈঠকে প্রত্যাবর্তনসংক্রান্ত এসওপি সই করে। বাংলাদেশ হাইকমিশন
জানিয়েছে, প্রত্যাবর্তনসংক্রান্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য এসওপি ২০১৭ সালের আগে
স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ইইউ এসওপির ধারাবাহিকতায় এসেছে। সাধারণত ভিসা
ব্যবস্থার অপব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকার চেষ্টা করে অনেকে
অবৈধ হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি
অপরাধী এবং ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও অবস্থানকারীদের দ্রুততার সঙ্গে
ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। ব্রিটিশ
টেলিগ্রাফ পত্রিকায় গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত
বছর মার্চের আগের ১২ মাসে যারা যুক্তরাজ্যের ভিসার নিয়ম ভেঙে সে দেশে
স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তেমন বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১১
হাজার। প্রশ্ন হচ্ছে, অবৈধ হয়ে পড়া এই ১১ হাজার অভিবাসীর কারণে কি বাংলাদেশ
অনেক বড় সম্ভাবনা নষ্ট করবে? সেই বড় সম্ভাবনা কী? প্রকাশিত খবরে বলা
হয়েছে, লন্ডনে স্বরাষ্ট্রবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশ
থেকে যুক্তরাজ্যে দক্ষ ও উচ্চ মেধাবীদের অভিবাসনসহ সুশৃঙ্খল অভিবাসনের
সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক পারস্পরিক আইনি সহায়তা,
প্রত্যর্পণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবেলার
পাশাপাশি বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে
আলোচনার পথ খুলেছে। যুক্তরাজ্যে অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি অবস্থানকারী
বাংলাদেশিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে আগে বাংলাদেশ-ইইউ এসওপি অনুসরণ করা
হতো। প্রত্যাবর্তনসংক্রান্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য এসওপি ২০১৭ সালের আগে
স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ইইউ এসওপির ধারাবাহিকতায় এসেছে।
ব্রিটেন জানিয়েছে,
তারা বাংলাদেশকে তাদের মূল্যবান অংশীদার মনে করে। আর সে কারণেই ন্যায্য
পদ্ধতি তৈরি করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তারা সমঝোতায় এসেছে।
একদিকে
ভোগবিলাস ও প্রাচুর্যের হাতছানি, অন্যদিকে জীবনের রূঢ় কঠিন বাস্তবতা। এরই
মধ্যে সামান্য উন্নত জীবনের আশায় অনেকে বিদেশে পাড়ি জমায়। একসময় অবৈধ হয়ে
পড়ে। নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দেয় প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে। এ সমস্যার
সমাধান করতে হলে বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পথ সহজ করতে হবে। বৈধ অভিবাসনে
উৎসাহ দিতে হবে। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের
মিশনগুলোকে তৎপর হতে হবে। বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে।
দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে। সর্বোপরি অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতা
সৃষ্টিসহ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।