ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চর-নুরনগর গ্রামের নাজমুল হক হানিফ। বুধবার (১৫ মে) বাড়ি ফিরেই মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ভেবেছিলাম মা-বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনদের আর দেখবো না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, হে আল্লাহ তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। এভাবেই মৃত্যুর দুয়ারে বসে ৩৩ দিনরাত কাটাতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পরে ১৩ এপ্রিল ভোরে মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি মেলে। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন। জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে গেলে মৃত্যুর ভয় কাটলেও তৎক্ষণাৎ মায়ের কোলে ফেরার কোনও উপায় ছিল না। তাই মুক্তির পর থেকে শুরু হয় মা-বাবার বুকে ফেরার অপেক্ষা।’
আজ মা-বাবা তাদের সন্তানকে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি। বারবার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন আল্লাহর কাছে।
আবু সামা ও নার্গিস খাতুন দম্পতির সন্তান নাবিক নাজমুল। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাজমুল মা-বাবাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর-ভালোবাসায় জড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। ছেলেকে কাছে পাওয়ার স্বস্তির সঙ্গে ছিল উচ্ছ্বাস। আনন্দে যেন খুশির বাঁধ ভেঙেছে। আত্মীয়-স্বজনসহ নাজমুলের গ্রামের মানুষও ভিড় করেন বাড়িতে। তার ফেরার মধ্য দিয়ে পরিবার ও স্বজনদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে।
নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, ‘সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, ‘দিন-রাত ছেলের ছবি দেখতাম এবং মোবাইলে কোনও সংবাদ এলো কিনা এই চিন্তায় বসে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছিল না। জাহাজ জিম্মি করার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে নাজমুলের বাবা। আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আজ সব রান্না করেছি। ছেলেকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করবো।’
মা-বাবার পাশে দাঁড়ানো নাজমুল হক বলেন, ‘জিম্মিকালে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যুর আতঙ্কে। বন্দুক হাতে টহল দিতো জলদস্যুরা। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আজ এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই। শুধু বলতে চাই, মা-বাবাকে কাছে পেয়েছি, এর চেয়ে বড় সুখ কী হতে পারে। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।’
প্রসঙ্গ, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগরে জিম্মি হয় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহসহ ২৩ নাবিক। এদের মধ্যে ক্রু হিসেবে ছিলেন সিরাজগঞ্জের নাজমুল হক। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে নাজমুলের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন মা-বাবা, বোনসহ স্বজনরা।
১৩ এপ্রিল ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয় জাহাজটি। এরপর জাহাজটি যায় দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার বন্দরে গিয়ে চুনাপাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর নাবিকরা দেশে ফিরেছেন।